Buying money

নতুন টাকার নোট, ছোট থেকে বড় সবারই এই নতুন টাকার নোটের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষন রয়েছে। অনেকেই নতুন টাকা পেলে তা সংরক্ষণ করেন, এই টাকা ব্যায় না করে যত্ন করে রেখে দেন। তবে এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বিভিন্ন উৎসবের সময়, বিশেষ করে ঈদের সময় ঈদ সালামী হিসাবে। ঈদে ছোটদের হাতে নতুন টাকা উৎসবকে আরো আনন্দঘন করে তুলে আর তাইতো ছোটদের নতুন টাকার নোট দিয়ে ঈদ সালামি দেয়া আমাদের কালচারে পরিনত হয়েছে। ঈদের ছুটিতে প্রায়ই সবাই চেস্টা করে থাকেন নতুন টাকা কেনার। আর এজন্য প্রতিটি শহর জুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন টাকার নোট বেচা কেনার অসংখ্য দোকান। শুধু যে উৎসবের সময়েই এই টাকার চাহিদা থাকে তা কিন্তু নয় প্রায় সারা বছরি এই টাকার চাহিদা থাকে কারন অনেকেই তাদের পুরোতন টাকা বা ছেড়া টাকার সাথে এই নতুন টাকা এক্সচেন্জ করেন। 

অনেকেই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও টাকা বেচাকেনার এই বিষয়টা ইসলামে অনুমোদিত নয়। কেন ইসলামে অনুমদিত নয় এবং বিকল্প কি উপায়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করা যেতে পারে তা নিয়েই আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইংশাআল্লাহ আশা করি এই পোস্টটি অনেক উপকারে আসবে।

ইসলামে কেন টাকা বেচাকেনা অনুমোদিত নয় তা নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের আগে জেনে নিতে হবে টাকা আসলে কি?

টাকা হচ্ছে একটা বিনিময় মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা কোন পন্য বা সেবা কিনে থাকি। টাকা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য পন্থা যার মাধ্যমে সবাই বিনিময় করতে রাজি থাকেন। অর্থাৎ টাকা হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে এমন একটি বস্তু বা মাধ্যম যা সবার কাছে একই মানের, যার চাহিদা ও মান সর্বদা একই। যেমন ১০০ টাকার একটি নোটের মান কখনো ৫০ টাকা হয়ে যাবে না বা বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যাবে না।

এখন প্রশ্ন হলো এই টাকা যা আমার বিনিময় করতে ব্যবহার করি সেটাকেই কি পন্য হিসাবে বিক্রি করতে পারবো? বা এই টাকা কি নিজেই পন্য হতে পারে?

জ্বী শর্তসাপেক্ষে আমরা টাকাকে বিক্রি করতে পারবো আবার পারবো না। যেমন আমরা যখন বাংলাদেশের টাকা দিয়ে অ্যমেরিকান ডলার কিনবো তখন ডলার হবে আমাদের কাছে পন্য যা আমরা মুদ্রা টাকা দিয়ে কিনছি। কিন্তু যখন আমরা টাকা দিয়ে টাকা কিনবো তখন বিষয়টি আর সঠিক হবে না কারন একটি ১০ টাকার নোট যে ভ্যালু রাখে ঠিক তেমনি আর একটি ১০ টাকার নোট একই ভ্যালু রাখে অথবা একটি ১০ টাকার নোট এবং পাঁচটি ২ টাকার নোট একই ভ্যালু রাখে অর্থাৎ একটা সমজাতীয় নোট কখনো একটি আর একটির থেকে কম মুল্যে বা বেশি মুল্যের হবে না ।

এখন প্রশ্ন হলো নতুন টাকা কি পুরাতন টাকার থেকে বেশি ভ্যালু রাখতে পারে? 

সহজ উত্তর না, নতুন টাকা দিয়ে যা কিনতে পারবেন একই জিনিস আপনি পুরাতন টাকা দিয়েও কিনতে পারবেন। 

তাহলে এর যে একটা চাহিদা রয়েছে? এজন্য কি এর দাম বড়ে না? 

জ্বী এই জন্যই নতুন টাকা নিয়ে ব্যবসা হয়ে থাকে। যদি চাহিদা না থাকতো তবে নতুন টাকা কেউ কিনতে যেতো না। 

তবে ইসলাম কেনো এটাকে সমর্থন করছে না?

এই কারনটি উল্লেখ করে অনেকই মানুষ টাকার ব্যবসাকে হালাল বলতে চান, তবে এখানে একটা জিনিস বুঝতে হবে নতুন টাকার প্রতি আমাদের এই চাহিদার মুলত বাস্তবিক কোন মুল্য নেই। আর এই চাহিদার জন্য যদি একই নোটের ভিন্ন ভিন্ন মুল্য হয় তবে এতে সামগ্রিক বিনিময় ব্যবস্থা ভেংঙ্গে পড়বে। পৃথিবীতে যে উদ্দেশ্য টাকা/মুদ্রার প্রচলন হয়েছে তা ভেংঙ্গে পড়বে এবং ক্রয় বিক্রয় কঠিন হয়ে পড়বে।

যদি একই মানের পুরাতন টাকার থেকে নতুন টাকার মুল্য বেশি হয় তবে মান ঠিক রাখার জন্য বার বার পুরাতন টাকাকে তুলে নিয়ে নতুন টাকা প্রিন্ট করে বাজারে ছাড়তে হবে আর এটা টাকাকে একটা পন্য পরিনত করবে। জেনে রাখে হবে যে টাকা কখনো পন্য হতে পারবে না যতক্ষন না একই দেশের একই ধরনের টাকা হবে। আর ইসলাম এই ব্যপারটকেই সমর্থন করে না যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে দিবে। টাকাকে এমন একটি ধারনা থেকে তৈরি করা হয়েছে যে এর দাম কম বেশি হবে না বরং পন্যের দাম কম বেশি হবে। পন্যের দাম বাড়লে বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হবে আর পন্যের দাম কমলে কমটাকা দিয়ে কিনতে হবে। এবং সর্বদা টাকার মান একই থাকবে (একটা দেশের সাপেক্ষে)

ধরুন আপনি ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেন, এই টাকায় আপনি মুরগি কিনবেন, এবার ৫০০ টাকার নতুন নোটে ২ কেজি মুরগি পেলেন কিন্তু অন্য জন ৫০০ টাকার পুরাতন নোটে ১.৫ কেজি মুরগি পেলো এবার ভাবুন বিষয়টা কেমন হয়ে যাবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া আপনাকে ১.৫ কেজি মুরগির জন্য ৫০০ টাকা ব্যায় করতে হচ্ছে আর তাতে নতুন টাকা হোক আর পুরোতন টাকা হোক। এটাই হচ্ছে স্বাভাবকি প্রক্রিয়া যেখানে টাকার মান একই থাকে কিন্তু পন্যের দামের কম বেশি হয়।

এবার আসুন দেখি ইসলামে এই বিষয়ে কি বলা হচ্ছে- ইসলামে একই পরিমান টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া কে সুদ বলা হয়। এবং আমরা সবাই জানি আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম করেছেন। সুদ হয় কম টাকার সাথে বেশি টাকার লেনদেনে। ব্যবসা হয় টাকার সাথে পন্যের বিনিময়ে। এছাড়াও একই ধরনের মুদ্রার বেচা কেনা করা যাবে কিনা তা রাসূল সাঃ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন যেমনঃ

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর এবং লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান পরিমাণ ও হাতে হাতে (নগদ) হবে। অবশ্য এ দ্রব্যগুলো যদি একটি অপরটির ব্যতিক্রম হয় (অর্থাৎ- পণ্য এক জাতীয় না হয়) তোমরা যেরূপ ইচ্ছা বিক্রি করতে পার যদি হাতে হাতে (নগদে) হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯১৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৯১৭)

হাদিসের ব্যাখাঃ রাসূল সাঃ এর যুগে বিনিময় মাধ্যম হিসাবে ছিলো- স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, গম, যব, খেজুর, লাবন আমাদের যেমন কাগজের টাকা, কয়েন কিংবা ডিজিটাল মুদ্রা ইত্যাদি । তিনি বলেন, স্বর্ণের বিনিময়ে কেউ স্বর্ণ নিলে সমান সমান নিতে হবে এবং নগদে নিতে হবে । একই ভাবে রৌগ্য, গম, যব, খেজুর ও লবনের ক্ষেত্রে । তবে যদি কেউ স্বর্ণ দিয়ে রৌপে কিনতে চায় তবে কম বেশি (মার্কেট ডিমান্ড অনুযায়ী) হতে পারে ।

এই হাদিস দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে একই ধরনে মুদ্রা দিয়ে একই ধরনের মুদ্রা ক্রয় করা যায় না বরং সমান সমান বিনিময় করতে হবে । অর্থাৎ কেউ ১০ টাকার একটি নোট দিয়ে ১১ টাকা নিতে পারবে না তাকে অবশ্যই ১০ টাকাই নিতে হবে ।

তবে কেউ যদি একদেশের মুদ্রার বিনিময়ে অন্য দেশের মুদ্রা কিনে তবে তা জায়েজ হবে এবং এই অতিরিক্ত দেয়া সুদ হবে না। এই বিষয়ে ফতোয়া উল্লেখ করছি এখানে ক্লিক করুন

Buying money

আমরা সম্ভব্য যে সবউপায়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারিঃ

১। প্রতি বছরই বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে নতুন টাকা নিয়ে আসে আর এই টাকা গুলো বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে আসে। সুতরাং যদি সরাসরি ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করা যায় তবে কোন অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় না। 

২। পরিচিত কোন ব্যাংকার থাকলে তিনি ব্যাংক থেকে সহজেই নতুন টাকা এনে দিতে পারবেন। 

৩। বাজারে নতুন টাকা আসলে সবার হাতে হাতে চলে যায় বিশেষ করে বিভিন্ন শপিং মলের ক্যাশ কাউন্টারে চেন্জ দেবার সময় নতুন টাকা দেন তারা। 

৪। যখনই নতুন টাকা হাতে আসবে তখনই অল্প অল্প করে সংগ্রহ করে রাখলে নতুন করে আর কিনতে হবে না। 

৫। অনেক এটিমএ বুথে নতুন টাকা দেয়া হয় সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন সেক্ষেত্রে হয়ত শুধু মাত্র ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট পাবেন।

এভাবে নতুন টাকা সংগ্রহ কিছুটা সময় সাপেক্ষ হলেও তা তুলনামুলক ভালো কারন, বাজার থেকে কিনতে হলে আপনাকে প্রতি একশটি নোটের বিনিময়ে দিতে হবে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা যা একদিকে যেমন অতিরিক্ত ব্যায় অপরদিকে সুদ যা ইসলামে হারাম।