Blue Light

রাতে ঘুমোতে প্রায়ই দেরি করে ফেলি, না আসলে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমোতে গেলেও কেনো যেনো দ্রুত ঘুম আসে না। ইদানিং কেন যেন আলোর দিকে তাকালে চোখ ব্যাথা করে, বিশেষ করে ল্যাপটপের দিকে তাকালে বেশি ব্যাথা করে, কখনো এর সাথে মাথা ব্যাথাও করে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

এমন অনেক রোগ লক্ষন নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এমন রোগীর সংখ্যা এখন অসংখ্য। এর কারন কি? আর কেনোইবা এমন সমস্যা এখন আমাদের জেনারেশন ফেস করছে? এক কথায় উত্তরদিলে এর পিছনে রয়েছে ব্লু লাইট (Blue Light) এর ক্ষতিকর প্রভাব। প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন আজকের এই পোস্টে আলোচনা করবো ব্লু লাইট কি? কিভাবে এটি আমাদের চোখের ক্ষতি করে? এ থেকে বেচে থাকার উপায় কি?

(UV) ব্লু লাইট কি?

ব্লু লাইট বা blue violet হলো ঐসব আলোক বর্ণালীর একটি যা মানুষ তার চোখে দেখতে পায়। তবে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোটো যা প্রায় ৪১৫ ন্যানোমিটার থেকে ৪৫৫ ন্যানোমিটার এর মাঝে এবং এর এনার্জি ধারন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি যেমনঃ এই ব্লু লাইট যে এনার্জি বহন করে তা প্রায় ৩.১ eV (Electron Volts) যেখানে লাল আলো মাত্র ১.৮ eV এনার্জি বহন করে।

UV light Wave

Blue Light কিভাবে আমাদের চোখের ক্ষতি করে?

এই ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘের এবং বেশি এনার্জির নীল আলোটি খুব সহজেই আমাদের চোখের কর্ণিয়া ও লেন্স ভেদ করে রেটিনায় পৌঁছে যায় আর এর ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের চোখের রোগ সৃষ্টি করে।

ব্লু লাইটের জন্য আমাদের চোখের কি কি ক্ষতি হয়?

এই নীল আলোর জন্য আমাদের চোখের এবং শারীরিক বিভিন্ন রোগ হয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো-

১। ঘুমের সিডিউল নষ্ট হয়ে যায় এবং রাতে ঘুম সহজে আসে না।

দিনের বেলা আমাদের তেমন একটা ঘুম আসে না কারন দিনের বেলা আলো অনেক বেশি থাকে আর এই আলোতে ব্লু লাইটও থাকে কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে রাতের বেলা আমাদের ঘুম আসে কারন রাতে ব্লু লাইট থাকে না। কিন্তু যদি কোন সোর্স থেকে আমাদের চোখ ব্লু লাইট রাতেও পেয়ে বসে তবে আমাদের ঘুম যে সাইকেল তা বাঁধা প্রাপ্ত হয়।

২। চোখে ক্লান্তি আসা এবং চোখে ঝাপসা দেখা।

দীর্ঘক্ষন চোখে ব্লুলাইট আসার ফলে চোখে ক্লান্তবোধ হয় এবং চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মনে হয় চোখের সামনে কোন কিছু ক্লিয়ার না কেমন একটা আস্তরন পড়ে আছে।

৩। চোখ ব্যাথা করা ও মাথা ব্যাথা করা।

ব্ল লাইটের ফলে চোখের ভিতরে ব্যাথা হয় যা পরে মারাত্মক চোখের অসুখে পরিনত করতে পারে। চোখের ব্যাথার পাশাপাশি মাথাও ব্যাথা করে।

৪। চোখ শুকিয়ে যাওয়া।

চোখের পানি আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারি বিশেষ করে ক্লিয়ার দেখার জন্য এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস থেকে চোখকে রাক্ষা করার জন্য। ব্লু লাইটের ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়।

৫। ত্বকের ক্ষতি হয়।

ব্লু লাইট ব্যাপকভাবে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে থাকে বিশেষ করে ত্বকে বিভিন্ন ডার্ক সার্কেল হয়। মুখের ত্বক কোমল হওয়ায় মুখে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

ব্লু লাইটের উৎস কি কি?

গবেষণায় বলা হয়েছে আমরা যে সব আলো দেখি তার তিন ভাগের এক ভাগ তৈরি হয় এই ব্লু লাইট দিয়ে আর এজন্য এর উৎস সর্বত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো-

১। সূর্যের আলো।

২। কম্পিউটারের মনিটরের থেকে আসা আলো।

৩। মোবাইল বা স্মার্টফোনের ও ট্যাবের স্ক্রিনের আলো।

৪। টেলিভিশন স্ক্রিনের আলো।

৫। এলইডি লাইট ইত্যাদি।

সূর্যের আলো ব্লু লাইটের বড় প্রাকৃতিক সোর্স হলেও এর মাধ্যে আরো অনেক ধরনের আলো থাকে যা আমাদের শরিরের জন্য একদিক থেকে উপকারি তবে সূর্যের নিচে দীর্ঘক্ষন থাকলে বা তাকিয়ে থাকলে ব্লু লাইট আমাদের ক্ষতি করবে। কিন্তু ডিজিটাল এসব ডিভাইস থেকে আসা ব্লু লাইট আমাদের চোখের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কারন হলো আমরা এগুলো অনেক কাছে থেকে দেখি এবং এক টানা দীর্ঘক্ষন দেখি।

যেসব উপায়ে আমরা ব্লু লাইট থেকে চোখকে সুরক্ষা রাখতে পারি?

ব্লুলাইট থেকে চোখকে সুরক্ষা রাখতে আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারি এর মধ্যে যেগুলো সহজ এবং কার্যকরি তা উল্লেখ করছি এর মধ্যে প্রায় সবগুলোই আমি নিজে আমার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি। যেমনঃ

anti blue glass

১। চশমা ব্যবহার করা

বাজারে এখন বিভিন্ন বাজেটের মধ্যে ব্লু লাইট প্রোটেক্ট বা এন্টি ব্লু বা ব্লু কাট লেন্স/গ্লাস নামে পাওয়া যায়। তবে গ্লাস কেনার আগে চেক করে দেখে নিবেন যে এগুলো দিয়ে ব্লু লাইট পাস হয় কি না। চশমার দোকানেই এমন ব্লু লাইট লেজার থাকে যা দিয়ে চেক করে নিতে পারবেন। আমি এ পর্যন্ত কয়েকজনকে এমন চশমা কিনে দিয়েছি এবং তাতে দাম ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত লেগেছিলো। 

Reading Mode

২। মোবাইলে রিডিং মুড চালু করে রাখা

এখন প্রায় সব স্মার্টফোনেই রিডিংমুড ফিচারটি আছে যা মোবাইলের স্ক্রিন কে হলুদাভাব করে দিবে এবং ব্লু লাইটের পরিমান কমিয়ে দিবে। আপনার মোবাইলে সেটিংস থেকে অপশনটি খুঁজে বের করুন অথবা কারো সাহায্য নিন।

৩। বিভিন্ন এন্টি ব্লু সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা

মোবাইল, কম্পিউটার এর জন্য বিভিন্ন নামে এখন এন্টি ব্লু এপ্স ও সফ্টওয়্যার পাওয়া যায় এর মধ্যে বহুল পরিচিত এপ্স হচ্ছে F.lux যা মোবাইল ও কম্পিউটার দুই ভার্সোনের জন্যই পাওয়া যাবে ফ্রিতে।

f lux

এছাড়া CareUEyes নামের কম্পিউটার সফ্টওয়্যারটি ভালো কাজ করে। এটি আপনি গুগল করে ডাউনলোডকরে নিতে পারেন। কিভাবে সেটআপ করবেন তার ভিডিও সহজেই ইউটিউবে পাবেন শুধু CareUEyes লিখে সার্চ করতে হবে।

Careueyes

৪। Anti Blue স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করা

ব্লু লাইট থেকে চোখকে নিরাপদ রাখতে এখন বাজারে এন্টি ব্লু লাইট স্ক্রিন প্রোটেক্টর পাওয়া যায়। মোবাইল ও কম্পিউটার স্ক্রিনের জন্য বিভিন্ন মডেলের নাম দিয়ে অনলাইনে বা সরাসরি মার্কেটে খুঁজলে অনায়াসেই পেয়ে যাবেন। 

anit blue screen protector

৫। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা

চোখে যাতে অনেক আলো একসাথে না আসে এজন্য মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ৫০% এর নিচে রাখা। আর অল্প আলোতে আরো প্রয়োজনমত কমিয়ে নেয়া এতে চোখের উপর আলোর চাপ কম পড়বে।

৬। এছাড়া স্ক্রিনের সামনে কম সময় দিয়ে এই ব্লু লাইট থেকে বেচে থাকা যায় বিশেষ করে রাতে বেলা মোবাইল কম্পিউটার ও টেলিভশন স্ক্রিন থেকে যতটা পারা যায় দুরে থাকা। ঘুমানোর কমপক্ষে ৩০মিনিট আগে থেকে মোবাইল স্ক্রিনে না তাকানো।

৭। ত্বককে সুরক্ষা রাখতে নাইট ক্রিম বা সিরাম ব্যবহার করতে পারেন ও দিনের বেলা সানস্ক্রীন ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, চোখ আমাদের অত্যন্ত মুল্যবান একটি অঙ্গ এর ব্যাপারে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। ডিজিটাল এই যুগে আমরা প্রযুক্তি নির্ভর হলেও এগুলোর ক্ষতি থেকে বেচে থাকার কৌশল রপ্ত করে আমাদের সুস্থ থাকতে হবে।