গত জুলাই মাস থেকে মোবাইল সিম অপারেটর কোম্পানিগুলো উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে যা আগে ছিলো মাত্র ৫%। তবে এই অতিরিক্ত ভ্যাট সরকার তাদের উপর আরোপ করেনি বরং সিম কোম্পানিগুলো নিজেরাই এই অতিরিক্ত কর দিতে চেয়েছেন। সিম কোম্পানিগুলোর মতে এই অতিরিক্ত ভ্যাট অথাৎ ১৫% ভ্যাট দিলে তারা পূর্বের তুলনায় বেশি লাভোবান হবেন। এর আগে ২০১৮ সালে সরকার সিম কোম্পানিগুলোর উপর ৫% ভ্যাট নির্ধারন করেছিলেন যাতে ইন্টারনেট এর দাম কম রাখা যায়। 

আজকের এই পোস্টে আমি অত্যন্ত সহজ ভাষায় আলোচনা করার চেষ্টা করবো কিভাবে অতিরিক্ত ভ্যাট দিয়েও সিম কোম্পানি গুলো আগের তুলনায় বেশি লাভ করবে।


vat increase

প্রথমত নতুন এই অতিরিক্ত ভ্যাটের জন্য সরকার ও সিম কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে ঠিকিই কিন্তু জনসাধারনের ব্যায় বেড়ে যাবে, কারন এই অতিরিক্ত ভ্যাটের ব্যায় বহন করবে সিম ব্যবহারকারীগন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আগে যে ৫% ভ্যাট ছিলো তা কিন্তু এই ব্যবহারকারি গন দিতেন আবার এখন যে ১৫% ভ্যাট তাও ব্যবহারকারি গনই দিবেন যা সরকার পাবে, তাহলে সিমকোম্পানি গুলো কিভাবে লাভ করবে?

এক কথায় বললে ফিন্যান্সে একটি টার্ম রয়েছে যার নাম Vat Rebate বা ভ্যাট রেয়াত। এর মানে কি? একটি ছোট উদাহরন দিলে আশা করি ক্লিয়ার হয়ে যাবে। 

ধরুন একটি কোম্পানি নামঃ A তাদের কোন পন্য তৈরির জন্য কাচামাল কিনে এনে পন্য বানায়। আমরা যখন কোন কিছু ক্রয় করি তখন এর জন্য ভ্যাট দিয়েই সেটা ক্রয় করি। এমনি ভাবে কোম্পানি A ধরুন তারা ১০০ টাকার কাচা মাল কিনে আনলেন এবং সেখানে ১৫% ভ্যাট তথা ১৫ টাকা ভ্যাট হিসাবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসলেন। তাহলে কোম্পানি A এর কাচা মাল বাবদ খরচ পড়লো ১১৫ টাকা। এবার কোম্পানি A তাদের কেনা এই কাচা মাল থেকে পন্য তৈরি করবেন এবং সেই পন্য তারা তাদের কাস্টমারের কাছে ২০০ টাকায় বিক্রি করবেন আর এই বিক্রির জন্য তাদের আবার ১৫% ভ্যাট দিতে হবে মানে, ৩০ টাকা (এই ভ্যাটের টাকাটা কিন্তু ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হবে)। কিন্তু যেহেতু কোম্পানি A  কাচা মাল কেনার সময় একবার ভ্যাট হিসাবে ১৫ টাকা দিয়েছেন তাই তারা নতুন এই ভ্যাট দেবার সময় আগের দেয়া ঐ ১৫ টাকা ভ্যাট ছাড় পাবেন।

অর্থাৎ নতুন ভ্যাট (৩০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বিয়োগ হয়ে ভ্যাট হবে) = ১৫ টাকা। অর্থাৎ এখানে তারা তাদের ভ্যাট থেকে ১৫ টাকা সেভ করতে পারলেন। 

আর এই ভ্যাট রেয়াত শুধু মাত্র ১৫% ভ্যাট প্রদান করার শর্তেই পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ আগের ৫% ভ্যাটের ক্ষেত্রে সিম কোম্পানিগুলোর ভ্যাট থেকে সেভ করার সুযোগ ছিলো না। এছাড়াও আরো কারন রয়েছে-

সরকার এই ১৫% ভ্যাট প্রদান কারিদের জন্য আরো একটি নিয়ম রেখেছেন তাহলো। কোন কোম্পানি যদি তাদের ট্যাক্সেবল ইনকামের ২৫% পর্যন্ত [ ১০০ টাকার ২৫ টাকা ] সরকারের নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করে তবে তারা আরো ১৫% পর্যন্ত ট্যাক্স সেভ করতে পারবে। 

তাহলে এক দিকে ঐসব বিনিয়োগ থেকে তো ভবিষ্যতে কোম্পানি গুলো আয় করবে আবার এর পাশাপাশি আরো অতিরিক্ত ১৫% পর্যন্ত ট্যাক্স সেভ করতে পারবে। 

আর এ জন্যই সিম কোম্পানি গুলো বিটিআরসি ও এনবিআর এর কাছে আবেদন করে ৫% ভ্যাট থেকে বৃদ্ধি করে ১৫% ভ্যাট নেবার জন্য চিঠি দিয়েছিলো।


আশা করছি সহজ করেই লিখতে পেরেছি । এই পোস্ট নিয়ে যেকোন মতামত কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে পারেন ।