বর্তমানে আমরা শুধুমাত্র কথা বলা বা বার্তা পাঠানোর জন্যই আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না । মোবাইল ফোন এখন আমাদের এই স্মার্ট জগতের সবচেয়ে ঘনিষ্ট সঙ্গী । যুগের সাথে তাল মেলাতে এই মোবাইল ফোনর মাঝে এসেছে অনেক অনেক পরিবর্তন । তাছাড়া প্রতিবছর স্মার্টফোন কোম্পানি গুলো বাজারে আনছে অসংখ্য নতুন নতুন মডেল । মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে কখনো কম মুল্যের মডেল, কখনো হাই পার্ফর্মেন্স সমৃদ্ধ মডেল বা গেমিং মডেল আবার কখনো ডিজাইন কে গুরুত্ব দিয়ে সুন্দর দৃষ্টিনন্দন মডেল বাজারে আনেন কোম্পানিগুলো । বিভিন্ন মার্কেটে বিভিন্ন মডেল ছাড়েন ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে । এখন সমস্যার বিষয় হলো এত এত সব স্মার্টফোনের মধ্যে হতে আপনার বাজেট ও চাহিদ অনুযায়ী বেস্ট মডেলটি কিভাবে খুঁজে বের করেন?
সম্মানিত পাঠক আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো স্মার্টফোন কেনার আগে ঠিক কোন কোন বিষয় গুলো দেখে কিনতে হয় এবং কোন গুলোতে তেমন গুরুত্ব না দিলো হবে । আমরা আশা করছি আজকের এই পোস্ট আপনার ডিসিশন ম্যেকিংয়ে অনেক সহযোগিতা করবে ।
বিঃদ্রঃ আমরা এই পোস্টটি লিখছি এন্ড্রয়েড ইউজারদের কথা চিন্তা করে কিন্তু আপনার পছন্দের অপারেন্টিং সিস্টেম যদি iOS হয় তবুও এই পোস্ট কিছুটা হলেও সহযোগিতা করবে আশা করছি ।
১। ব্লিড কোয়ালিটিঃ
সর্বপ্রথম যে জিনিসটি দেখতে হবে আপনি যে স্মার্টফোনটি কিনবেন তার ব্লিড কোয়ালিটি কেমন হবে । সাধারনত দুই ধরনের স্মার্টফোন পাওয়া যায়, ক. প্লাস্টিক বডি খ. মেটাল বডি । তবে এর সাথে অনেক ফোনের সামনে ও পিছনে গ্লাস থাকে । আপনার যদি বার বার মোবাইল ফোন ফেলে দেবার অভ্যাস থাকে তবে আপনি অবশ্যই কোন ফুল মেটাল বা প্লাস্টিক বডির ফোন চয়েস করবেন । তবে এখনকার অনেক ফোনে গরিলা গ্লাস ৫ ব্যবহার করা থাকে যা মোটামুটি শক্ত । যা মোটামুটি ১.২ মিটার উচু থেকে পড়লেও টিকে থাকতে পারবে ।
২। প্রোসেসরঃ
স্মার্টফোন কেনার সময় যে বিষয়টির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় তা হলো এই প্রোসেসর । মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের প্রোসেসর এ ফোন পাওয়া যায় । যেমনঃ quadcore, octa core, Qualcomm, Snapdragon, MediaTek আরো অনেক ধরনের বিভিন্ন নামের রয়েছে । তবে এর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোসেসর হলো Snapdragon প্রোসেসর । তবে ছোট একটি বিষয় মাথায় রাখলে সহজেই আপনার চাহিদার প্রোসেসরের ফোনটি কিনতে পারবেন তা হলো, ফোনের CPU স্পিড Gigahertz (GHz) এ উল্লেখ করা থাকে । যে ফোনের Gigahertz যত বেশি সেই ফোন তত বেশি ফাস্ট ।
৩। স্টোরেজ / মেমোরি
আপনি যে স্মার্টফোনটি কিনছেন তার Ram এবং Rom কেমন হবে তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে । আপনার যদি অনেক এপ্স ফোনে ইন্সটল করে রাখার দরকার হয় তবে অবশ্যই কমপক্ষে 4gb Ram বা তার চেয়ে বেশি Ram এর ফোন চয়েস করতে হবে । তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলো Ram বেশি হলেই যে ফোনটি ভালো হবে তা কিন্তু নয় । যদি অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রোসেসরের ফোনে বেশি Ram দেয়া থাকে তবে তা ভালো পার্ফর্মেন্স নাও দিতে পারে এবং বেশি চার্জ ব্যায় করতে পারে ।
এর পরের বিষয়টি হলো Rom এর পরিমান দেখে নেয়া । আপনার যদি অনেক ফাইল রাখার প্রয়োজন হয়, যেমনঃ আপনি প্রচুর ছবি তুলেন, বা ভিডিও বা মুভি সেভ করে রাখেন তবে Rom এর পরিমান 64gb হওয়া বঞ্চনীয় । এখন মার্কেটে 256gb স্টোরেজের ফোন সহজেই পাওয়া যায় ।
৪। ক্যামেরাঃ
স্মার্টফোন কেনার অনেক বড় একটি কারন থাকে এই ক্যামেরা । তাই ক্যামেরাতে একটু রিসার্চ করেই ফোন কেনা বুদ্ধিমানের কাজ । এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা মানেই ভালো ছবি তা কিন্তু নয় বরং মেগাপিক্সেলের সাথে ক্যামেরার অন্য ফিচার গুলোও দেখতে হবে । কারন সব ফোনের ক্যামেরা সফ্টওয়্যার বেশি মেগাপিক্সেলে ছবি তুললেও ভালো প্রোসের করতে পারে না বিধায় ছবি সুন্দর হয়না বা সঠিক কালার আসে না । ক্যামেরার যেসব ফিচার দেখে দিবেন যেমন, অ্যাপার্চার, আইওসো লেভেল, স্পিড, লো লাইট, অটোফোকাস ইত্যাদি । আপনি হয়ত জেনে থাকবেন যে আইফোন এখনো তাদের স্মার্টফোন গুলোতে ১২ মেগাপিক্সেলে ক্যামেরা ব্যবহার করে । কিন্তু তবুও আইফোনের তোলা ছবি ও ভিডিও অনেক বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার থেকে ভালো হয় ।
৫। ডিসপ্লেঃ
ডিসপ্লে থেকে দুটি জিনিস দেখে কিনতে হয় ক. ডিসপ্লে সাইজ খ. ডিসপ্লে রেজুলুশন । ডিসপ্লে সাইজ ৫ ইঞ্চি থেকে ৫.৫ ইঞ্চি আদর্শ ধরা হয় তবে ৬ ইঞ্চির উপরে ফোনের চাহিদাও কম নয় তবে এতে ফোন বহন করা একটু ঝামেলার হয় ।
ডসিপ্লের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এর রেজুলুশন কারন রেজুলুশন যত ভালো হবে ডিসপ্লে তত ক্লিয়ার ও সার্প হবে । সাধারনত HD+ ডিসপ্লেকে বাজেটের মধ্যে বেস্ট ধরা হয় । যদিও এর থেকেও আরো অনেক ভালো ডিসপ্লে রয়েছে যেমনঃ QHD+, 4K display ইত্যাদি ।
এছাড়াও আর একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় তা হলো ডিসপ্লে টেকনোলজি কি হবে? ডিসপ্লে কি LCD Screen হবে নাকি OLED Screen হবে । LCD Display সহজেই পাওয়া যায় মার্কেটে তবে এর থেকে বেটার অপশন হলো OLED Display তবে এর জন্য ফোনের দাম বেড়ে যাবে ।
৬। ব্যাটারিঃ
ব্যাটারির পুরো বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহার কারির উপর । আপনি যদি গেমিং এর জন্য স্মার্টফোন কিনতে চান তবে অবশ্যই 3500mAh ব্যাটারির উপরে নিতে হবে । আর যদি নর্মাল ডেইলি কাজের জন্য ব্যবহার করতে চান তবে 3000mAh ব্যাটারিতেও চলবে । তবে এখন মার্কেটে 4500mAh ব্যাটারির ফোন সহজেই পাওয়া যায় বাজেটের মধ্যে । তাই বেশি ব্যাকআপ পেতে বড় ব্যাটারির ফোন কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ । তবে এক্ষেত্রে প্রোসেসর স্মার্টফোনের ব্যাটারির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত ।
৭। সিকিউরিটিঃ
এখনকার স্মার্টফোনের কমন সিকিউরিটি ফিচার হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট লক, ফেস লক । তবে এগুলো কতটা ফাস্ট ও একুরেট কাজ করে যে বিষয়ে দেখে নিতে হবে ।
৮। স্পিকার বা সাউন্ড কোয়ালিটিঃ
অনেকের জন্য সাউন্ড কোয়ালিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে যারা মোবাইলে অডিও শোনেন কিংবা ভিডিও দেখেন অথবা ভিডিও কনফারেন্স করেন । এমন যদি হয় যে সাউন্ড স্পষ্ট ও লাউড হওয়া জরুরি তবে নিচের সাইডে স্পিকার রয়েছে এমন ফোন চয়েস করতে পারেন এতে করে সান্ডড কোয়ালিটি ভালো পাওয়া যাবে ।
৯। বিভিন্ন ধরনের সেন্সরঃ
বর্তমানে স্মার্টফোন গুলোকে বেশি স্মার্ট করেছে এই সেন্সর গুলো এর মধ্যে রয়েছে, Accelerometer, Gyroscope, compass, GPS, Biometric sensors, proximity, Lighting etc. এগুলো দেখে কিনলে অনেক কাজে দিবে । তবে অতি জরুরি কিছু নয় ।
১০। ডিজাইনঃ
এত সব আলোচনা বৃথা যদি না কারো ডিজাইন পছন্দ হয় । কেউ কেউ রাউন্ড কর্নার পছন্দ করে আবার কেউ স্ট্রেইট কর্নার । কারো কাছে হয়ত কালার বেশি গুরুত্বপূর্ণ । তবে যাই হোক না কেনো একটি ফোন সব সময় সাথে থাকবে, অনেক অনেক বার ব্যবহার করা হবে তা যদি নিজের পছন্দমত না হয় বা রুচিশীল ডিজাইন ও কালারের না হয় তবে এত সব ফিচার থাকার মুল্য কোথায় । তাই মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই এর বডি ডিজাইন ও ইন্টারফেস দেখে কিনবেন।
0Comments
Post a Comment