টাকা পয়সা ধনদৌলত দুনিয়ার জীবনের এক অতিব গুরুত্বপূর্ন চাহিদা। প্রত্যেকটি মানুষের টাকার দরকার হয়। একজন যত ধার্মিক ব্যক্তি হোন আর না হোন সবার জীবনে টাকা পয়সার চাহিদা থাকবেই। তবে বর্তমান যুগে এই টাকা পয়সা অর্জন যেন এক নেশায় পরিনত হয়েছে। এই নেশার কোন শেষ নেই। যার যত টাকা পয়সা থাকবে তার যেনো আরো প্রয়োজন হবে। এভাবে সৃষ্টি হয়েছে অসীম বস্তুবাদী চাহিদা এবং দুনিয়া মুখিতার। মানুষ তার দুনিয়াকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে আছে। এ এক মারাত্মক আত্ম অহংকার, সবাই প্রতিযোগিতা করছে কে কার থেকে বেশি সম্পদ অর্জন করতে পারে। কে কার থেকে বেশি ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। 

আর এই প্রতিযোগিতা মানুষকে তার তাওহীদ থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থের কারনে কিভাবে একজন মানুষ তার তাওহীদ থেকে দুরে সরে যায় এই বিষয়টি নিয়ে আজকের এই পোস্টে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। 

অর্থ ও তাওহীদ

তাওহীদ হচ্ছে আল্লাহকে একক হিসাবে মেনে নেয়া। কোন কোন কাজে একক হিসাবে মেনে নেয়া? 

  1. আল্লাহ আমাদের রব, তাকে রব হিসাবে একক মানা।
  2. আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক, তাকে সবকিছুর উপর একক ক্ষমার মালিক হিসাবে মেনে নেয়া।
  3. আল্লাহ হচ্ছেন তার সৃষ্টির রিজিক দাতা, তাকে একমাত্র রিজিকদাতা হিসাবে মেনে নেয়া। ইত্যাদি

[ইনশাআল্লাহ তাওহীদ বিষয়ে অন্য কোন পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো]

আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

﴿هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ﴾ [فاطر: ٣]

“আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা আছে কী? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩]

যদিও আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করছেন যে তিনি আমাদের রিজিক দিয়ে থাকেন তবুও এই পৃথিবীতে মানুষের অন্যতম পেরেশানির বিষয় হলো রিজিকের ব্যবস্থা করা ৷ আর এ জন্যই এর মাঝে রয়েছে অনেক বড় পরিক্ষা ৷

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

তুমি কক্ষনো চোখ খুলে তাকিও না ঐ সব বস্তুর প্রতি যা আমি তাদের বিভিন্ন দলকে পার্থিব জীবনে উপভোগের জন্য সৌন্দর্য স্বরূপ দিয়েছি, এসব দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তোমার প্রতিপালকের দেয়া রিজিকই হল সবচেয়ে উত্তম ও সবচেয়ে বেশী স্থায়ী। [সুরাঃ ত্বহা, আয়াতঃ ১৩১]

আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্পষ্টভাবে একথা বলে দিয়েছেন যে তিনিই একমাত্র রিজিক দিয়ে থাকেন, এবং এই রিজিকের মাধ্যমে পরিক্ষা নিয়ে থাকেন সুতরাং তোমরা তার উপর ভরসা করো এবং হারামে জড়িও না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু থেকে খাদ্য গ্ৰহণ করুন এবং সৎকাজ করুন; নিশ্চয় আপনারা যা করেন সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত। [সুরা মুমিনুন, আয়াত ৫১]

এমন স্পষ্ট ঘোষনা থাকার পারে সহজেই কারো রিজিকের সোর্স দেখলেই বলে দেয়া যাবে তার তাওহীদের কি অবস্থা ৷ তিনি তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে হালালের উপর থাকতে পেরেছেন নাকি দুনিয়ার মোহে হারামে জড়িয়ে পড়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পুণ্যময় তিনি, যার হাতে রাজত্ব, তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন তোমাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।’ (সুরা মুলক : ১-২)

মানুষ যখন দুনিয়ার জীবনের ধোকায় পড়ে তখন হারাম জানলেও এড়িয়ে যায়, যদিও তারা জামাতে সলাত আদায়ের জন্য শামিল হয় ৷ রমজানে সিয়াম পালন করে, যাকাত দেয় হজ্জ করে । দান সদাকা করে থাকে। তাদের পোশাক কথা বার্তা ইমানদারদের মত। এরা অর্থ আয়ের জন্য হারামের উপর সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বস করেছে।

অনেকে এভাবে বলেন,

  • ব্যবসায় এসব করতে হয়, তা না হলে মার্কেটে টিকে থাকা যায় না।
  • কেউ আবার বলেন, টাকা দেখো টাকার রং দেখো না ৷
  • কেউ বলেন, ক্যারিয়ারের জন্য এসব প্রথম প্রথম এসব করতে হয় ৷
  • অনেকে ভাবেন পরে হজ্জ করে তওবা করে নিবেন ৷

তবে এই হারামের জন্য তাদের কোন ইবাদত বা হজ্জ কাজে আসবে না। কারন ইবাদতে পূর্ব শর্ত হলো হালাল ইনকাম।

একবার আমাকে আমার এক আত্মিয় বলেছিলেন, আজম সব ধরনের চাকরি করতে হবে দরকার হলে ব্যাংকেও চাকরি করতে হবে ৷ আমি কিছু বলিনি, বলে হয়ত লাভ নেই ৷ ব্যাংকে যে সুদের লেনদেন হয় এটা দিনের মত স্পষ্ট, সুদ হারাম এটা আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এর পরেও একজন মুসলিম এর সাথে কখনই জড়াবেন না, যদি তার তাওহীদের শপথ ভঙ্গ হয়ে যায়।

একজন ব্যবসায়ি কখনই ওজনে কম দিবেন না, নষ্ট পন্যটা ভালো পন্যের সাথে মিশিয়ে দিবেন না, ধোকা দিয়ে পরিবর্তন করে পন্য বেচবেন না যদি তার তাওহীদের শপথ ঠিক থাকে। তিনি জানেন আল্লাহ তাকে দেখছেন আর তিনি তো ওয়াদা করেছেন আল্লাহর সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলবেন।

একজন মানুষ মন থেকে তাওহীদকে মেনে নিলে কখনই হারামকে তার জন্য হালাল মনে করবেন না, হারামের উপর সন্তুষ্ট হবেন না। হারামের উপর সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করার নামান্তর।

একজন মানুষের না জানা থাকার কারনে বা প্রথম দিকে যখন দ্বীনকে পালন করতো না তখন কোন গুনাহ করলে তা থেকে যদি পরবর্তিতে ফিরে আসে তবে তার আগের গুনাহ গুলোকে মাফ করে দেয়া হবে, তবে গুনাহ জানার পরে পুনরায় কেউ গুনাহে জড়ালে, বিশেষ করে যারা স্পষ্টভাবে গুনাহের ব্যাপারে জানেন তাদের তাওহীদ নষ্ট হয়ে যাবে।

দুনিয়ার এ সম্পদের দুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও কোন মুল্য নেই। বাস্তব সত্য হচ্ছে এই দুনিয়ায় সম্পদের পাহাড় কখনোই কোন কাজে আসে না, শুধুমাত্র মানুষ যতটুকু খায়ে ফেলে, যতটুকু পরে নষ্ট করে আর যা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। এর অতিরিক্ত মানুষ দুনিয়াতেই রেখে চলে যায়। একজন মানুষ কখনই তার অধিক সম্পদের জন্য কিয়ামতের দিন সম্মানিত হবেন না, যদি তার আয় হয় হারাম পথে। বরং এগুলো তার জন্য হবে সীমাহীন কষ্টের কারন।

পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই, দুনিয়ায় সবাই বেঁচে থাকে, সবারই পরিক্ষা নেয়া হয় এবং সবাই মারা যান ৷ যার বেশি টাকা থাকে সেও মারা যান ৷ হারামের উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাওহীদকে নষ্ট করতে চাই না ৷ আল্লাহ যেন এমন কঠিন পরিক্ষা না নেন ৷