গত ৪ সেপ্টেম্বার ২০২২ তারিখে বিকেল ৩ টা ৬ মিনিটে একটি এসএমএস আসে ০১৮৮৬৫৬০৮৫৫১ (01886560851) নাম্বার থেকে। এসএমএস টিতে লিখা ছিলো

নিচের স্ক্রিনশর্টটি দেখুন- amznmall.com A Scam Site
বিস্তারিত জানার জন্য লিংকে ক্লিক করলাম, লিংকটি একটি হোয়াটস এপ (Whats App) গ্রুপে নিয়ে গেলো। গ্রুপে জয়েন করলাম । গ্রুপের নাম - Amazon group 1988
এই গ্রুপের যারা এডমিন ছিলো তাদের মোবাইল নাম্বার গুলো হলো -
(এই নাম্বার গুলো শুধুমাত্র মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই শেয়ার করছি যেগুলো Scam Site amznmall.com এর Whats app group এর এডমিনরা ব্যবহার করতো)
গ্রুপে জয়েন করার কিছুক্ষন পর আরো ২০০জনের বেশি মানুষ জয়েন করে এবং এডমিনরা কিছু ইনস্ট্রাকশন বার বার গ্রুপ চ্যাটে দিতে থাকে। ঐ মেসেজ গুলোর সব গুলোই তাদের স্ক্রিপ আকারে সাজানো, একটার পর একটা তারা কপি করে দিয়ে থাকে। যেহেতু এ গ্রুপটাতে মেসেজ করা যেতো না তাই আমি এডমিনদের মধ্যে যারা একটিভ তাদের মেজেস করে কথা বলার চেস্টা করলাম। প্রথমেই বুঝতে পারলাম যে তারা কেউ বাংলাদেশি নয়, তারা যে রিপ্লাই গুলো দেন সেগুলো কোথাও থেকে ট্রান্সলেট করে এনে রিপ্লাই করেন।
আমি একজনকে তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাস করলে সে জানায় তার নাম sedwin থাকে অ্যামেরিকায় যদিও আমার বিশ্বাস হলো না। http://amznmall.com/ সাইটটা একটু চেক করতে শুরু করলাম, প্রথমে জানলাম ডোমেইন টি মাত্র ১ সপ্তাহ আগে কেন এবং সাইটির মুল ভাষা জার্মানি । মুলত জার্মান ভাষা থেকে ট্রেন্সলেট করে বাংলা করা হয়েছে। তবে আমার ধারনা এই সাইটটি অপারেট করতো ভারতের কোন স্ক্যামার গ্রুপ।
এই সাইটির কার্যক্রম সংক্ষেপে বর্ণনা করে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি
amznmall.com সাইটে সাইনআপ করার ফর্মটি একটি নাম মাত্র ফর্ম মাত্র, যে কেউ তা বুঝতে পারবে, কারন কোন ডাটা ভ্যালিডেইট করা হয় না, তাই যা টাইপ করবেন তাতেই সাইন আপ হয়ে যাবে। সাইটের ভিতরে মুল কাজ হলো এমাজন থেকে কিছু পন্যের অর্ডার রিকুয়েস্ট দেয়া হবে আপনাকে, আপনি সেই পন্যগুলোর অর্ডার করবেন এবং পেমেন্ট করবেন, পেমেন্ট করার জন্য তারা আপনাকে প্রথমে ৫০০ টাকা দিবে। যাইহোক এই অর্ডার ও পেমেন্ট এর জন্য মাত্র ২ ক্লিক করলেই হবে । এর পর সেই পন্য কেনার জন্য সেলার আপনাকে ১০% প্রফিট সহ মুলটাকা ব্যাক করে দিবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। এভাবে আপনার একাউন্টে টাকা বাড়তে থাকবে। দিনে মাত্র ৫ মিনিটে সব কাজ শেষ হয়ে যায় এবং ১০০০ টাকার বেশি আয় হয়। তবে শর্ত হচ্ছে আপনাকে ৭ দিন কাজ করে তার পর টাকা উইথড্রো করতে হবে। বিকাশ ব্যবহার করে টাকা তোলা যাবে বলে তারা প্রচার করতো। আদতে তাদের সাইটে টাকা উঠানো কোন ফাংশন ছিলো না, শুধু একটা বাটন ছিলো, যা কাজ করতো না।
আমি টানা ৮ দিন লেগে ছিলাম, এবং সাইটির খুটি নাটি বুঝার চেস্টা করেছি । আমার মুল জানার বিষয় ছিলো ঠিক কোন সময় তারা আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে সেটা জানা। প্রথম ৫ দিন কোন সমস্যা ছিলোনা তারা ভালো যোগাযোগ রাখতো মেসেজে এবং কাজ করে আমার একাউন্টে যোগ হয়ে যায় ৬০০০+ টাকা। এর পর শুরু হয় মুল ব্যাপার।
৬ তম দিনে আমার একাউন্টে বড় একটা কাজ আসে যে কাজের জন্য আমার একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ছিলো না । তাহলে কি করতে হবে? আমাকে টাকা টপআপ / রিচার্জ করতে হবে । এই অপশটা সাইটে আগে থেকেই ছিলো কিন্তু সেখানে আগে ফোর্স করে নিয়ে যাওয়া হতো না, কিন্তু এখন টাকা পর্যাপ্ত না থাকায় রিলোড করে ঐ রিচার্স পেজে নিয়ে যাওয়া হয় । আর এটাই মুলত এই সাইটের স্ক্যামের মুল বিষয় ।
কিন্তু বড় কাজটা কিভাবে স্কিপ করা যায় এবং অন্য ছোট কাজ গুলো করে পরে বড় কাজটা করা যায় তা নিয়ে ঘাটঘাটি করতেই বুঝে ফেললাম এবং সহজে স্কিপ করে আরো দুইদিন কাজ করে আমার একাউন্টে জমে গেলো ৮৬০০ টাকা মত, কিন্তু ৭ম দিনে আমার কাজ আসতে শুরু করলো ২৩০০০ টাকার যা স্কিপ করা যাচ্ছিলো না, কারন তাদের প্লান ছিলো এমনই যে, আপনি ৭ দিনের কাজ শেষ করতে পারবেন না এবং টাকা দাবি করতে পারবেন না।
৭ম দিন আসতে না আসতেই তারা চুপ হয়ে গিয়েছিলো হয়তো কেউ তাদের ধোকায় পা দেয়নি। এখন আর সাইটিতে প্রবেশ করা যায় না।
এই সাইটির নাম সার্চ করতে গিয়ে জানতে পারি এমন অনেক অনেক সাইট বিভিন্ন নামে ভারতে জন্ম নিয়ে অনেক মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে যারা কাজ না করে টাকা ইনকামের লোভ করে থাকেন। দুনিয়াতে কেউ কাউকে কাজ না করে পেমেন্ট করে না। এবং সহজ কাজ বলতে কিছু নেই। আর তাদের কাজ যদি এত সহজ আর লাভজনক হতো তবে তারা আপনাকে কেন এই সুযোগ দিবে? তারা নিজেরাই লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ করিয়ে নিতো। যখনই দেখবে কেউ অতিরঞ্জিত করে কিছু বললে যা স্বাভাবিক নয় তবে ধরে নিবে সে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছে।
যদিও এই সাইটটির কার্যক্রম বন্ধ এখন হয়ে গেছে তবুও এই পোস্টি করছি কারন হতে পারে ভবিষ্যতে এমন আরো সাইট আসতে পারে নতুন কোন নাম বা রুপ নিয়ে, তখন হয়ত কিছু মানুষকে এই পোস্টটি সাহায্য করবে ধোকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে। ধন্যবাদ
0Comments
Post a Comment