বর্তমানে তিনটা বইয়ের ওয়েবসাইটে আমার শপিং কার্ট রেডি করা আছে, যে গুলোতে বইয়ের মুল্য - ৩৭৯০ টাকা, ২২৬০ টাকা, ১০৫৬ টাকা । সব মিলিয়ে ৩০টার বেশি বই, আমার মতে ঐ বই গুলা আমার লাগবেই আমাকে ঐ বই গুলা পড়তেই হবে । আমি ভাবছি এখন না হোক যে কোন সময় আমার ঐ বই গুলোর তথ্য জানা আমার লাগতে পারে তাই সেই বই গুলো আমার বুক শেলফে থাকা জরুরি । যদিও এখনো একটা বইয়ের ডেলিভারি আমি হাতে পাইনি হয়ত দু একদিনের ভিতরে পাবো (সেখানে ১৭ পিস বই রয়েছে)। এই পোস্টি যখন লিখছি, তার আগের রাতে আমি যখন ১১ টা বইয়ের একটা লিস্ট অর্ডার করে দিবো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন আমার মনে হলো আমি কি বই কেনার নেশায় পড়ে গেছি? থামলাম বই গুলো অর্ডার না করে ভাবলাম, আমি কি সত্যি বই কেনার নেশায় পড়ে গেছি? এ বিষয়ে আজকের এই পোস্টে আমার সত্য স্বীকারোক্তি ।

Confession

সাধারনত সবাই সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম যেমন, ফেসবুকে সময় কাটায়, আমিও ফেসবুকে থাকি কিন্তু, একটু পর-পর ফেসবুক থেকে বের হয়ে আমি ইউটিউব কিংবা ইন্টাগ্রামে প্রবেশের পরিবর্তে রকমারিতে প্রবেশ করি, ওয়াফিলাইফে প্রবেশ করি। মাঝে মাঝে আমি জানিও না কখন আমি বই বাছাই করা শুরু করে দিয়েছি এবং কিছু বই কার্ট কিংবা উইশ লিষ্টে যোগও করে ফেলেছি । 

আমার বেশিরভাগ সার্চ বই রিলেটেড হওয়ায়, আমার টাইমলাইনে সব সময় বইয়ের এড আসতেই থাকে । বিভিন্ন প্রকাশনির পেইজ ও গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকায় তারা আমাকে সবসময় নতুন বই সম্পর্কে আবডেট রাখে । ইদানিং দেখছি আমাকে দুই একজন হোয়াটস এপে বইয়ে তথ্য দিয়ে মেসেজ করেন । তাছাড়া আমি নিয়মিতই আমার নিকটবর্তী বইয়ের দোকান গুলোতে ভিজিট করি । এই সেলারদের মধ্যে একজন এখন আমার ভালো বন্ধু । আমার জন্য তার বুক স্টোর উন্মুক্ত আমার যে বই লাগে আমি নিয়ে আসতে পারি, (তিনি বাকিতে বই দেন আমাকে) এজন্য আমার বই কিনতে তেমন বাধা প্রাপ্ত হতে হয় না । আমি কোন বই ম্যানেজ করতে না পারলে তিনি ঐসব বই আমার জন্য কালেক্ট করে এনে দেন । আর এভাবে করে কয়েক বছরে আমার কাছে বইয়ের একটা বিশাল কালেকশন হয়ে গেছে । এখন আমি আমার তৃতীয় বুক শেলফটি কেনার কথা ভাবছি ।  

বই কেনার ব্যাপারে আমার পাগলামো স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এটা আরো প্রকট ছিলো ২০১৬ সালের দিকে যখন আমি নিয়মিত বইমেলায় যেতাম, নীলক্ষেতের দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে বই সংগ্রহ করতাম । যাইহোক এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত এত বই কিনে কি আমি সব বই পড়ছি? নাকি শুধু বই, শেলফে সাজিয়ে রাখছি?

হুম, এখন যদি আপনি আমার রুমে প্রবেশ করেন তবে আপনি একটু অবজার্ভেশন করলেই বুঝতে পারবেন যে, আমি এখন ৩ টা বই পড়ছি । আমার দুই টেবিলে একাডেমিক ও জব প্রিপারেশনের বইয়ের পাশাপাশি, আরো দুইটা অতিরিক্ত বই রয়েছে । এবং আমার ঘুমানোর রুমের বেড সাইড টেবিলে আরো একটা বই রয়েছে । আমি মুলত এই তিনটা বইই পড়ছি, রাতে ঘুমানোর আগে একটা পড়ি, পড়াশুনার মাঝে যখন পড়তে ইচ্ছা করে না তখন আত্মউন্নয়নমুলক বই গুলো পড়ি । এভাবেই আমার ক্যালেন্ডারের পাতা পরিবর্তন হয় সাধারনত । 

মুল সমস্যা হলো, আমি যখন কোন বই পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি এই বইটা আমার ভালো লেগেছে, বইটা দারুন আমি তখনি ঐ লেখকের অন্য বইগুলো সার্চ করতে শুরু করি এবং ভাবি সেগুলোও মনে হয় এই বইটার মত দারুন হবে । আর এভাবে করে আমি মটিভেইট হয়ে আরো বই কিনি । আর এজন্য আমার না পড়া বইয়ের পার্সেন্টটেজটাই এখন বেশি, প্রায় ৬০% (আমার অনুমান) । এর ভিতরে এমন কতগুলো বই রয়েছে যে গুলো আমি আর কখনই পড়বো না, বা পড়তে আমার ভালো লাগে না, কিছু বই সময়ে সময়ে প্রয়োজন হলে পড়ি আর কিছু বই বৃদ্ধ হলে পড়বো বলে সাইড করে রেখে দিয়েছি । কেমন আজব না, বৃদ্ধ বয়সে কোন বইটা পড়বো তা আমি এখন কিনে রেখেছি !! আর এই লিষ্ট গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে ।

আমি জানিনা কিভাবে এই বইয়ের নেশা কাটিয়ে ওঠা যায় । যখনি আমি বই কেনার কথা ভাবি তার পক্ষে আমার হাজারটা পজেটিভ যুক্তি থাকে । শুধু একটিই সমস্যা যার কারনে লিস্ট করার সাথে সাথে বই অর্ডার দিতে পারি না, তা হলো টাকা । টাকা ম্যানেজ করতে কিছুদিন সময় লেগে যায় । জানি না, আমার কাছে যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকতো তবে না জানি কি হতো । 

আবার এই যে অতিরিক্ত বই কেনা একটা নেশা, এই নেশার কথা আমি এখন বুঝতে পারলেও আমি এই নেশার ব্যাপারে আমি এখনো পজেটিভ । আমার কাছে অন্তত এক ডজন যুক্তি আছে যে, অন্য নেশার থেকে বইয়ের নেশা থাকা ভালো । যদিও নেশা নেশাই, সেটি যে জিনিসেরই হোক এর থেকে মুক্ত থাকা জরুরি তবুও কেন যেন এই বই কেনার নেশা থাকায় আমি গর্বিত বোধ করছি । আবার আমি এও বুঝতে পারছি আমার বড় কারো থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত ।