গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান, বিগত কয়েক দশক থেকে এমন স্লগানে মুখোরিত সারা বিশ্ব। গাছ পরিবেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই কিন্তু তাই বলে গাছ লাগালেই পরিবেশ বেঁচে যাবে এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আচ্ছা বিগত সাল গুলোতে এত এত স্লোগান দিয়ে গাছ লাগানোর ফলে কি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমেছে? না কমেনি বরং বেড়েছে, তাহলে প্রবলেমটা কোথায়? কেন গাছ লাগানোর ফলেও দিনের পর দিন পরিবেশ আগের থেকে অবনতির দিকে যাচ্ছে? এই বিষয় গুলো নিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত মতামত তুলে ধরবো এই পোস্টে।
সাধারনত প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে বললে অনেকেই পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করে বসেন। এই লেখার বিষয়েও আমি তার আসংখ্যা করছি। তাই অনুরোধ করবো এই লেখাটি পুরো পড়ে মন্তব্য করতে। ধন্যবাদ
শুধু গাছ লাগিয়ে যে পরিবেশের দুষণ কামানো যাবে না, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য আমি পুরো বিশ্বকে না টেনে বরং সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের কথা বলতে চাই। বাংলাদেশ যার আয়তনের প্রায় ১৭ শতাংশ বন। অন্যভাবে বললে, সবুজে ঘেরা এই দেশের এমন কোন প্রান্ত নেই যেখানে সবুজ বনভুমি নেই। তবুও শুধু গাছ লাগিয়ে এই দেশের পরিবেশকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না এবং সম্ভবও নয়। কেন সম্ভব নয় সেই বিষয়টা উল্লেখ করার আগে আমি আরো কিছু তথ্য শেয়ার করতে চাই।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের যে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে তাতে তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫% এবং আগামি ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তাপমাত্রার সাথে আরো ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যোগ হবে। এতদিনে মাত্র হাফ পার্সেন্ট (০.৫%) বেড়েছে শুনলে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না সাধারনত। এই হাফ পার্সেন্টেজের জন্যই কিন্তু এখন তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ছোট সংখ্যাটা কোথায় কোথায় প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতে পারবেন নিচের ইমেইজ গুলো দেখলে।
এই সামান্য ০.৫% এর জন্য দেশে সামান্য বৃষ্টি হয়ে নিন্ম অঞ্চল ডুবে গিয়ে মারাত্মক বন্যায় রুপ নেয়, অন্যদিকে আমাদের সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। নদির গভিরতা কমে গিয়ে সেগুলোতে আর বেশি পানি জমে থাকে না। আবার গরমের সময় প্রচুর গরম পড়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় খরা দেখা দেয়। আমাদের ভুগর্ভস্থ খাবার পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে, এখন খাবার পানির সংকট দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। আপনি হয়ত এখন জনেন যে, বাংলাদেশ এখন আর ছয় ঋতুর দেশ নয়, এখন দেশে শুধু গ্রীষ্ম ও শীত এই দুই ঋতুর দেশ। বরষা কখন হয় তার নির্দিষ্ট কোন সময় এখন আর নেই। বিষয়টা এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।
এবার আসি মুল আলোচনায়, "শুধু গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব নয়"। পরিবেশবিদ গন গাছ লাগাতে বলেন কারন, গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। যত বেশি গাছ লাগানো যাবে তত বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করানো যাবে।
তাহলে আপনার মনে কি প্রশ্ন আসে একটা গাছ কতটুকু কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে?
একটা পূর্ণ বয়স্ক গাছ ১ বছরে (৩৬৫দিনে) মাত্র ২৫ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে এবং এভারেজে এটা গাছ ১০ থেকে ১৫ কেজির মত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে।
এবার আসি কি পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড আমরা কৃত্তিম ভাবে উৎপন্ন করি তার হিসাবে-
আমি যদি কলকারখানা, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, ইটের ভাটা, প্লাস্টিক পোড়ানো, গ্যাস পোড়ানো ইত্যাদি উল্লেখ না করে শুধু একটা ডিজেল চালিত যানবাহন কত কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে উল্লেখ করি তবে তাবে-
প্রতি ১ লিটার ডিজেল পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়ঃ
১ লিটার ডিজেল পুড়লে উৎপন্ন হয় ২.৬৮ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড
যদি একটু ছোট করে হিসাব করি, তবে শুধু মাত্র ঢাকাতে পাবলিক বাসের সংখ্যা ১২হাজার+
ধরুন প্রতিদিন একটা বাস গড়ে ২০লিটার ডিজেল পুড়ে। (যদিও আরো বেশি পুড়ে) তবে, মোট ডিজেল পুড়ে ২,৪০,০০০ লিটার। আর এই ২,৪০,০০০ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় ৬,৪৩,২০০ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ।
শুধুমাত্র এই এক দিনের উৎপাদিত ৬,৪৩,২০০ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করাতে ২৫,৭২৮ টি গাছের এক বছর ধরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে যেতে হবে। এবার এই সংখ্যাটার সাথে, সারা দেশের যানবাহন, কলকারখানা, ইটের ভাটা, প্লাস্টিক, গ্যাস .... যোগ করুন আর সংখ্যাটা চিন্তা করুন।
কত লক্ষ্য কোটি গাছ রোপন করলে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ করানো সম্ভব?
এটা বাংলাদেশের মত একটা ছোট দেশকে নিয়ে এই চিন্তা আমরা করছি। এবার তাহলে ভাবুন বড় বড় দেশকে নিয়ে যারা ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশনের চরম পর্যায়ে রয়েছে, সেই সাথে তাদের রয়েছে বড় বড় গ্রিনহাউজ প্রোজেক্ট তাহলে তারা কি পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে?
সারা পৃথিবীর বড় বড় দেশ গুলো যে পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে তার মাত্র ০.২০% কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে বাংলাদেশ। কিন্তু বড় বড় দেশ গুলোর এই কৃতকর্মের ফলে আগে যদি ঢুবে যায় তবে বাংলাদেশের মত দেশ গুলোই আগে ঢুবে যাবে। খরা, বন্যা, সাইক্লোন এর মত দুর্যোগ ভোগ করে আমাদের মত ছোট দেশ গুলো।
এটি স্পষ্ট যে, বড় বড় দেশ গুলো নিজেরা পরিবেশের ক্ষতি করে আমাদের যে গাছ লাগান গাছ লাগান পরামর্শ দিচ্ছে, যা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত। আসলে গাছ লাগিয়ে কিছুই হবে না, বরং কমিয়ে ফেলতে হবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন। এখন বড় বড় দেশ গুলো তো কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন কামাতে চায়না, তাই গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান বলে মিছে সান্তনা দেয় আমাদের মত ক্ষতিগ্রস্থ দেশ গুলোকে।
0Comments
Post a Comment