যাকাত হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ বা খুঁটি। সলাত বা নামাজের পর পরই যাকাতের স্থান। যাকাত অস্বীকার কারি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। আর যারা যাকাত কে অস্বীকার করে না কিন্তু আদায়ও করে না তাদের সতর্ক করতে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন, "যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পার্শ্বে কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল।" [বুখারী হা/১৪০৩]

অনেকেই যাকাত দিতে চান কিন্তু জানেন না কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে, কতটুকু দিতে হবে। তাই আজকের এই পোস্টে আমি খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করবো, সর্বনিম্ন কতটাকা থাকলে একজন মানুষের যাকাত ফরজ হবে। ইনশাআল্লাহ 

zakat

যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা, বৃদ্ধি পাওয়া । যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

ইসলামী শরীয়াতে যাকাত হলো শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত নিছাব পরিমাণ সম্পদ কারো নিকট ১ বছর অতিক্রম করলে সেই সম্পদের নির্দিষ্ট যে অংশ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করা হয় তার নাম যাকাত।

একজন স্বাধীন মুসলিম ব্যাক্তির নিকট যদি নেসাব পরিমান সম্পদ এক বছর পর্যন্ত গচ্ছিত থাকে তবে তার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে। 

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই নেসাবের পরিমান কতটুকু?

শরিয়াতে বিভিন্ন সম্পদের বিভিন্ন নেসাব রয়েছে, যেমন গবাদি পশুর নেসবা, ফসলের নেসবা ও টাকা-পয়সার নেসবা । আজকের পোস্টে আমরা শুধুমাত্র টাকা-পয়সা বা ব্যবসায়ী সম্পদের নেসাব নিয়ে আলোচনা করবো। এই নেসাবের হিসবা আমি বিস্তারিত উল্লেখ করছিঃ

স্বর্ণের নেসাব সাড়ে ৭ ভরী

অথবা ২০ মিসকাল বা ২০ দিনার 

১ মিসকাল = ৪.২৫ গ্রাম 

২০ মিসকাল = ৮৫ গ্রাম (২৪ ক্যারেট স্বর্ণ)

রূপার নেসাব সাড়ে ৫২ ভরী

অথবা ৫ উকিয়া তথা ২০০ দিরহাম 

১ উকিয়া = ৪০ দিরহাম

১ দিরহাম = ২.৯৭৫ গ্রাম 

২০০ দিরহাম = ৫৯৫ গ্রাম (খাঁটি রুপা)

অর্থাৎ কারো কাছে যদি সাড়ে ৭ ভরী সোনা বা ৮৫ গ্রাম সোনা, ১ বছর ধরে থাকে তবে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে । 

একই ভাবে কারো কাছে যদি সাড়ে ৫২ ভরী রূপা বা ৫৯৫ গ্রাম রূপা, ১ বছর ধরে থাকে তবে তার জন্য যাকাত ফরজ হবে ।  

[উভয় ক্ষেত্রেই সোনা ও রূপা খাঁটি হতে হবে । যদি সোনা ২৪ ক্যারেট না হয় তবে এর পরিমান বাড়বে]

এখন কারো কাছে যদি সোনা বা রূপা না থেকে?

ধরুন কারো কাছে সোনা বা রূপা নেই কিন্তু টাকা-পয়সা বা ব্যবসার সম্পদ রয়েছে তখন ঐ সাড়ে ৭ ভরী সোনার বাজার মুল্য যত অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রূপার বাজার মুল্য যত সেই পরিমান টাকা যদি ১ বছর ধরে থাকে তবে যাকাত ফরজ হবে। 

পোস্টটি যখন লিখছিঃ ৪ সেপ্টেম্বার ২০২২ 

আজ ২২ ক্যারেট ১ গ্রাম সোনার দামঃ ৭১৪০ টাকা, সুতরাং 

৮৫ গ্রাম সোনার দামঃ ৬,০৬,৯০০ টাকার বেশি

আজ ২২ ক্যারেট ১ গ্রাম রূপার দামঃ ১৩০ টাকা, সুতরাং

৫৯৫ গ্রাম রূপার দামঃ ৭৭,৩৫০ টাকার বেশি 

[বাজুস এর ওয়েবসাইটে আমি ২৪ ক্যারেট সোনা/রূপার দাম পাইনি, এটা সরাসরি বাজার থেকে জেনে নিতে হবে]

অর্থাৎ রৌপের নিসাবে কোন ব্যক্তির নিকটে যদি ৮০হাজার টাকার মত টাকা থাকে এবং তা যদি ১ বছর অতিক্রম করে তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। তাকে তার মোট টাকা বা ব্যবসায়ী সম্পদের মুল্যের ২.৫% বা ৪০ টাকায় ১ টাকা হারে অথবা ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে। 

আরো সহজ ভাবে বললে কারো নিকটে যদি ১ লক্ষ্য টাকা এক বছর ধরে জমা থাকে তবে তাকে এই টাকার যাকাত হিসাবে ২৫০০ টাকা দান করতে হবে যাকাতের নির্ধারিত খাতে। যাকাতের টাকা ইচ্ছামত বিতরন করা যাবে না বা টাকার পরিবর্ততে সম্পদ দিয়ে আদায় করা যাবে না। 

উল্লেখ্য যে, অনেকেই যাকাত না দেবার জন্য বলে থাকেন যে, স্বর্নের নেসাবে আমার টাকা হয়নি তাই আমি যাকাত দিবো না। কিন্তু মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া কমিটি ফাতাওয়া আল লাজনা আদ-দায়িমাহ, শাইখ ইবন বায সহ বড় বড় আলেম গন এ ব্যাপারে মত পোষণ করেছেন যে, টাকা পয়সার যাকাত রূপার নেসাবেই দিতে হবে, এতে করে যাকাতের যে মুল উদ্দেশ্য অর্থ সামাজিক উন্নায়ন ও দারিদ্য বিমোচন করা তা করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। 

পরিশেষে, এই পোস্টে আমি শুধু মাত্র কত টাকা থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে তা আলোচনা করেছি, শুধু স্বর্ন বা রৌপ বা ফসল, গবাদিপশুর নেসাব নিয়ে আলোচনা করিনি। এই পোস্টি করতে খালেস নিয়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত সঠিক তথ্য দেবার সর্বোচ্চ চেস্টা করেছি। এর পরেও কোথাও কোন ভুল বা কারেকশন থাকলে কমেন্ট করবেন আমাকে সতর্ক করবেন। অথবা এই রিলেটেড আরো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জিজ্ঞাসা করবেন আশা করছি।