বিশাল একটি গার্মেন্টসের ৮ম তলায় এক অফিসারের
শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মিটিং করছিলেন লেখক। কিন্তু ভাগ্যে আজ ধৈর্যের পরিক্ষা দেবার
দিন, হঠাৎ করেই ঘোষণা শুনতে পান আগুন লেগে গেছে বিশাল বড় এই গার্মেন্টটিতে। সবাই যে
যার মত তাড়াহুড়া করে বরে হয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ উপর থেকে লাফিয়ে পড়ছে। বড় বড় সব সিড়িগুলোতেও
এখন মারাত্মক চাপ, সকল কর্মীরা সে পথে বের হচ্ছে, এখানে কেউ নিচে পড়ে গেলে তার আর নিস্তার
নেই (লেখক মনে মনে ভাবছেন)। এই প্রতিষ্ঠানের বড় বড় অফিসাররা ধৈর্য না রাখতে পেরে কর্মীদের
সাথেই ধাক্কাধাক্কি করে সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন, কেউ কাউকে খেয়াল করছেন না। এসব দেখে
লেখক মনকষ্ট নিয়ে অফিস রুমে এসে বসলেন। ভাবছেন এই যে দেশ আজ কত উন্নত হয়েছে, দেশের
ফায়ার ডিফেন্সের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা খরচ করছে সরকার, সবাই যদি একটু ধৈর্য ধরতো,
তাহলে দমকল কর্মীরা সহজেই সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারতো, ঔ তো বাহিরে দমকল বাহিনীর
সাইরেন শোনা যাচ্ছে। (মনে মনে ভাবছেন লেখক)
আগুন লাগায় বাহিরে প্রচুর ধোয়া হচ্ছে, বিদ্যুৎও
নেই, সম্ভবত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই চুপচাপ কক্ষের থাই গ্লাসের দরজাটি লাগিয়ে ভিতরেই
বসলেন লেখক। আজ তাকে চরম ধৈর্যের পরিক্ষা দিতে হবে, আসলে কেউ তার মত এত ধৈর্যশীল
নয় প্রায় সবাই বের হয়ে গেছে। তার সামনে থাকা অফিসারতো অনেক আগেই চলে গেছে। শুধু বলে
গেছে যেভাবে পারেন বের হোন। লেখক ভাবছেন, যেই অফিসার এমন ক্রাইসিস এর সময় মাথা ঠান্ডা
রাখতে পারেন না তিনি কিভাবে এত বড় কোম্পানিতে কাজ করেন? আশ্চর্য!
-----
কিন্তু ১০-১৫ মিনিট পর সেই ধৈর্যশীল লেখকের
আর ভালো লাগছে না, আস্তে আস্তে ধোয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে, দরজার সাইড দিয়ে ধোয়া ঢুকে
রুম ভরে গেছে, প্রচন্ড গরম লাগছে এখন। মনে হয় বাহিরে প্রচুর আগুন, এই বিশাল গার্মেন্টসে
তো আর দহ্য পদার্থের অভাব নেই। পুরো বিলডিংয়েই তো সুতা আর কাপড় দিয়ে ভরা, তাছাড়া বড়
বড় সব মেশিন, সেগুলোতে থাকা মবিল তেলে আগুন লেগে মনে হয় এখন মারাত্মক অবস্থা।
-----
প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে যাচ্ছে কোন দমকল কর্মীকেই
এদিকে আসতে দেখছে না বলে বিরক্তের সাথে রাগও হচ্ছে লেখকের। এদিকে ধোয়ায় কিছুই দেখা
যাচ্ছে না, কোনদিকে যেন সিড়িটা? কিভাবে বের হবে এই উত্তাপ কারাগার থেকে? নিচে কি আগুন
নেভানো হয়েছে? (নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলেন লেখক)
এই অফিস রুমে বসে থাকলে আর জানা যাবে না বাহিরে
কি হচ্ছে, এবার লেখক সিদ্ধান্ত নিলেন বের হয়ে একটু দেখবেন চারিদিকের কি অবস্থা, পরবর্তী
কোন বইয়ে এই উত্তপ্তপুরীর ভিরতের ঘটনা লিখবেন বলে মনে মনে ঠিক করলেন লেখক। নতুন একটা
প্লট পেয়ে এই উত্তপ্ত রুমেও মুচকি হাসলেন লেখক, পৃথিবীতে তার মত কোন লেখক কি রয়েছে
যে কিনা সরাসরি এমন পরিস্থিতি দেখে বই লিখেছে? তাছাড়া তিনি যে ধৈর্য্যের পরিক্ষা দিয়েছেন
তাও তো কম নয়। এত ধৈর্যশীল আর সাহসী কোন লেখকের উদাহরন কি আছে ইতিহাসে?
এসব ভাবছেন আর দরজা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন লেখক,
ভাবছেন অন্তত অফিস কক্ষ থেকে তো বরে হওয়া যায়, এতে তো আর অধৈর্য্যের কিছু নেই। স্লাইডিং
ডোরের চকচকে সেই হাতলটা খুঁজে পেতে বেশি বেগ পেতে হলো না লেখকের, ওটা যেন এখন আরো চকচক
করছে। দেখা মাত্রই হাতলটা ধরে সজোরে টান দিলো লেখক।
-----
বাহিরে থেকে এত বড় আত্মচিৎকার শোনা গেছে কিনা
জানা যায়নি, দমকল কর্মীরা তখনো অগুন নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন
আর, মাইকে ঘোষনা করছেন ভিতরে কেউ থাকলে যেন কোন ভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দেন।
-----
লেখক এখন পড়ে আছেন ঐ অফিস কক্ষটার মেঝেতে,
অগুনের তাপে দরজার হাতলটা যেন বাইকের সাইলেন্সার পাইপের মত গরম হয়ে ছিলো। লেখকের হাতটা
মনে হয় পুড়ে গেছে। সেই সাথে এখন আর নিঃশ্বাস ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না, যেন
দম বদ্ধ হয়ে আসছে। জোরে জোরে কাশি দিয়েও ফুসফুসটাকে পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। আস্তে-আস্তে
দুর্বল হয়ে যাচ্ছে লেখকের শরীর।
-----
একেক দিকে একেকবার আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে
উঠছে, একদিকের আগুন একটু নিয়ন্ত্রনে আসছে তো অন্য দিকে আবার জ্বলে উঠছে। ফারায় সার্ভিসের
৪টা ইউনিট এক সাথে কাজ করছে কিন্তু তাতেও নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছেনা ১০তলা ভবনের এই গার্মেন্টের
আগুন। প্রায় তিন ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রনে আনা গেছে পুরো বিল্ডিংয়ের আগুন, পুড়ে ছাই হয়ে
গেছে প্রায় সবকিছু। কে জানে ধৈর্যশীল সেই লেখকের দেহটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে কিনা।


0Comments
Post a Comment