Worldcup football

শুধু মাত্র শায়েখ মিশারী রশিদ আল-আফাসি নয়, ডা. জাকির নায়েক সহ ২০০০ জনের বেশি দায়ী বর্তমানে (২০২২ কাতার বিশ্বকাপে) অবস্থান করছেন কাতারের বিভিন্ন শহরে। অসংখ্য মানুষ তারা সচেতন ভাবে কিংবা না বুঝে প্রশ্ন করছেন, আলেমরা কেনো বিশ্বকাপের মত এত বড় একটা হারাম আয়োজনে গিয়েছেন? যেখানে মদ, জুয়া, নারী, গান-বাজনা, ইউরোপীয় অর্ধ উলঙ্গ মেয়েরা রয়েছে। এই প্রশ্ন কারিদের মধ্যে যারা বুঝে প্রশ্নটি করছেন তাদের একটা শ্রণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সকল আলেমদের নামে কুৎসা রটানো এবং তাদেরকে মানুষের সামনে নেগেটিভ হিসাবে উপস্থাপন করা। এই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর কারন মানুষজন চায় না কোন আলেমকে গুনাহ করা অবস্থায় দেখতে এবং গুনাহগার আলেমের নসিহাত শুনতে। তাই বিষয়টি আমার জানার আলোকে স্পষ্ট করছি ইনশাআল্লাহ।

আরব দেশ গুলোর মধ্য থেকে কাতার এই প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের মত এত বড় একটা আয়োজন করছে। যা এর পূর্বে কোন আরব দেশে অনুষ্ঠিত হয়নি। কাতার শুধুমাত্র এই বিশ্বকাপ ২০২২ উপলক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করছে। এবং এই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন মানুষ কাতারে আসবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে।

যাই হোক কাতারের মত একটি প্রভাবশালী আরব দেশ বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে এবং সৌদি আরব, ইরানের মত দেশ ফুটবল বিশ্বকাপে সশরীরে অংশগ্রহন করছে বলে কি এবারের বিশ্বকাপ জায়েজ হয়ে যাবে? না অবশ্যই না, ইসলামের কোন হালাল এবং হারাম কোন ব্যাক্তি, দেশ, দল, মত এর ভিত্তিতে পরিবর্তন হয় না। তাই এই বিশ্বকাপও ইউরোপ অ্যমেরিকাদের আয়োজন করা বিশ্বকাপের মতই হারাম। তাহলে প্রশ্ন তো এসেই যায় তবে কেন আলেমরা সেখানে গিয়েছে? তারা কি ইহুদি খ্রিষ্টনদের দালালি করছে সেখানে? [সুবাহান আল্লাহ আলেমদের নামে এরকম কুৎসা রটানোর মানুষের অভাব নেই বাংলাদেশে]

প্রথমতঃ কাতারে বিশ্বকাপ হবে কি হবে না এতে আলেমদের কোন হাত ছিলো না, এই সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবে ঐ দেশের রাষ্ট্র পরিচালকদের বিষয় ছিলো। এবং আলেমরা কাতার ফুটবল বিশ্বকাপকে হালাল মনে করে সেখানে যাচ্ছেন না বা সেখানে তারা ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন না বরং তারা সেখানে দওয়াতি কাজের জন্য যাচ্ছেন।

একটি উদাহরন দিচ্ছি, বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াত নামে একটি দাওয়াতি জামায়াত রয়েছে যারা পথে পথে, মসজিদের আসে পাশে দাওয়াতি কাজ করে থাকেন। ধরুন আপনার বাড়ির পাশের কলেজ মাঠে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেব একটি ফুটবল খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং যেখানে অনেক মানুষ এসেছে ফুটবল খেলা দেখতে ও অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। এখন যদি ঐ কলেজের মসজিদে থাকা তাবলিগের ভাইয়েরা ফুটবল খেলা দেখতে আসা মানুষদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করতে এগিয়ে যান তবে কি তারা ঐ খেলাকে হালাল ভেবে যাচ্ছেন? নাকি ঐ খেলা ও অনুষ্ঠানের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে? জ্বী মোটেও কোন সম্পর্ক থাকবে না।

তেমনি ভাবে, কাতারের মত একটা মুসলিম দেশে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন বিধর্মী আসবে যারা হয়ত ইসলামের বানী এখনো শুনেনি, তাদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করতে আওকাফ সংস্থা নামের একটি দাওয়া সেন্টারের উদ্দোগে এবং কাতার সরকারের সহযোগিতায় আলেমরা সেখানে বিভিন্ন ভাবে দাওয়াতি কাজ করছেন। যেমন ডা. জাকির নায়েক সাহেব কনফারেন্সের আয়োজন করে ইসলামের বিষয় গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, কেউ বা হোটেল গুলোতে দাওয়াতি কাজ করছেন, কেউ বা স্টেডিয়ামের আসে পাশে দাওয়াতি কাজ করছেন ও লিফলেট বিতরন করছেন।

আলেমরা মুলত এই আয়োজনকে একটি সুযোগ হিসাবে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কারন এত এত বিধর্মীদের মাঝে তাদের দেশে গিয়ে সেফটির সাথে দাওয়াতি কাজ করার সুযোগ হয় না। তাই সবাই মিলে দাওয়াত দেবার চেস্টা করে যাচ্ছেন। আর এটা স্পষ্ট যে এর সাথে ফুটবল বিশ্বকাপের কোন সম্পর্ক নেই।

যদিও কাতার সরকারো বিভিন্ন উদ্দোগ নিয়ে ইসলামের বানি পৌছানোর ব্যবস্থা করেছেন, যেমনঃ

১। বিভিন্ন জায়গায় কুরআন হাদিসের বানী সহ ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছেন যাতে করে ভ্রমন কারিরা এগুলো পড়তে পারে এবং ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারে।
২। হোটেল গুলোতে QR কোড দিয়েছেন যা স্কান করে সরাসরি, কুরআন ও ইসলাম বিষয়ে জানতে পারবে। এগুলো বিভিন্ন ভাষায় রয়েছে।
৩। মসজিদের মুয়াজ্জিন চেন্জ করে সুরেলা কণ্ঠের মুয়াজ্জিনদের আনা হয়েছে যাতে বিধর্মীরা সুমধুর আযান শুনতে পায়।
৪। স্টেডিয়াম গুলোতে ওযু ও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৫। কুরআন তিলাওয়াত ও তার তরজমা করা হয় সুযোগ বুঝে।
৬। বিভিন্ন ইসলামি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে ইসলাম সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা করেছে কাতার সরকার।

এছাড়াও আরো অনেক পরিকল্পনা করেছেন অনেকে অনেক ভাবে এবং আরব বিশ্ব মুলতো এই আসর কে সুযোগ হিসাবে নিয়ে ইসলামি কালচার ও আল্লাহর বানি প্রচার করছে।

এতকিছু শুধুমাত্র দাওয়াতের নিয়তে করা হচ্ছে, বিশ্বকাপ কে হালাল বানানো বা বলা উদ্দেশ্য নয়। তবে যারা এই সব উদ্দোগকে প্রচার না করে বরং নেগেটিভ ভাবে আলেমদের উপস্থাপন করছেন, তারা না নিজেরা দাওয়াতি কাজ করে, না অন্যরা করলে তাতে খুশি হয়। সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের এই সব ব্যাক্তিদের কাউকে কিন্তু আমরা সরাসরি বিধর্মীদের কাছে দাওয়াতি কাজ করতে দেখি না । কেউ কেউ তো শুধু মসজিদ কেন্দ্রিক দাওয়াতি কাজ করেন, কেউ করেন দল কেন্দ্রিক। দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্য শুধু মাত্র আল্লাহর বানি প্রচার করাই হওয়া উচিত কেউ আমার দলে যোগদান করবে, বা আমাকে ভোট দিবে বা আমার সাথে বের হবে এমন হওয়া উচিত নয়।

পরিশেষে, সমালোচনা করার মানুষের অভাব হয় না কিন্তু প্রোপার নলেজ নিয়ে ইহুদি খ্রিষ্টানদের কাছে আল্লাহর বানি প্রচার করার মত মানুষ আমাদের মাঝে কমই আছে। যারা সেই নলেজ রাখেন তারা সমালোচনায় ব্যস্ত না হয়ে মুল কাজে নেমে পড়েন এবং যেখানে সুযোগ পান আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন, এই যেমন আমাদের আলেমরা বিশ্বকাপের মত হারামের দিকে যাওয়া মানুষদের পথে পথে দাড়িয়ে হকে দিকে আহ্বান করছেন। আল্লাহ আমাদের আলেমদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন আমিন।

নিচের ছবি গুলো দেখুনঃ





বিঃদ্রঃ এই লেখা বিশ্বকাপকে হালাল বলছে না, বিশ্বকাপ দেখাকে হালাল বলছে না বরং স্পষ্ট ভাবে প্রচার করছে, আমাদের আলেমরা হারামের দিকে যাওয়া মানুষদের রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে হকে দিকে আহ্বান করতেই সেখানে ছুটে গিয়েছেন।