imagination

শীতের সকাল, কি যেন ভেবে সকালের মৃদুরোদে গা এলিয়ে দিয়ে উইলিয়াম শেকসপিয়র নিয়ে পড়ছিলাম। সারা পৃথিবী উইলিয়াম শেকসপিয়রের কর্মের জাদুতে মুগ্ধ। তার ট্রেজেডি গুলো অন্যদের গল্পের থেকে আলাদা। অনেকটা জীবন মুখি। জীবন নিয়ে সমস্ত ঘটনা, গল্পগুলো পড়লে মনে হয়না এগুলো অবাস্তব, নিছক গল্প। অথচ দেখেন এই গল্প গুলো জীবনের কত শত সত্যকে চোখের সামনে মেলে ধরে।

শীতের এই দিনে পূবের এক কোন থেকে হালকা রোদ আসছে, সেই সাথে রয়েছে এলোমেলো মৃদু বাতাস, ঠিক বুঝা যাচ্ছে না কোন দিকে বাসাত গুলো বইছে। এমন সকালে শেকসপিয়র যেন আমাকে কল্পনার সাগরে ভেসে নিয়ে যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে সেই ঘটনা গুলো আমি দেখতে পাচ্ছি, যেন আমার চোখের সামনে ঘটছে। আমি দেখে পাচ্ছি কিং হ্যামলেটের মৃত্যু আবার প্রিন্স হ্যামলেট ও ক্লডিয়াসের মৃত্যুর সেই ঘটনা।

পরক্ষনেই কেন যেন মনে হলো এই মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক, কখনো ক্রোধের আগুলে জ্বলে উঠা, কখনো কাব্যিক হয়ে উঠা, কখনো ভালোবেসে ফেলার কথা গুলো যিনি লিখেছেন তিনিতো ১৬১৬ সালে নিজেও মারা গেছেন। কল্পনাতে ভাবছি আচ্ছা সেই সময়কার কেউ কি এখনো বেচে আছেন? অন্তত একজন? না। আমি আমার কল্পনাতে ভেবে কিনারা পাচ্ছিনা, এটাতো অনেক আগের সময়ের কথা। ফিরে এলাম বর্তমানের একটু আগে। যখন আমার দাদা বেচে ছিলেন। তিনি হয়ত বছর দশেক আগে মারা গেছেন। আচ্ছা আমার দাদার বন্ধুরা বা তার ছোটবেলায় পাড়া ছেলেদের যাদের সাথে খেলতেন তাদের কেউ কি বেচে আছে? থাকলেও থাকতে পারেন, তবে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

তবে সারা পৃথিবীর কথা কল্পনা করলে কোন প্রান্তে কেউ না কেউ সেই যুগের বেচে থাকতে পারে কিন্তু যদি মাত্র একধাপ এগিয়ে ভাবি? আমার দাদার পিতা ও তার বন্ধু বা সমসাময়িক সময়ে যারা জন্মগ্রহন করেছিলেন তাদের কেউ কি বেচে আছেন বর্তমানে? আমি কল্পনায় নিজেকে চ্যালেন্জ করলাম এটা সম্ভবই নয় সেই যুগের কাউকে বর্তমানে জীবিত পাওয়া যেতে পারে।

কল্পনাটি তখন খুবই বিয়োগান্তিক হয়ে উঠলো, ভাবলাম যদি একটা যুগের সকল মানুষকে একটা লাইনে দাড় করিয়ে দেয়া হয় তবে সেই লাইনটা কত বড় হবে? হয়ত পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যাবে। অথচ সেই লাইন গুলো কিনা একটার পর একটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।? আমরা সর্বোচ্চ ৩টা থেকে ৪টা জেনারেশন একসাথে দুনিয়াতে বসবাস করতে পারি। নতুন একটা জেনারেশন আসলে পূর্বের একটা জেনারেশন সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়।

এজন্য বোধয় সুকান্ত ভট্টাচর্য বলেছিলেন, “এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান”। সেই স্থান আমাদেরকেই ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবে আমাদের আগের জেনারেশন আমাদের তাদের স্থান ছেড়েদিয়ে চলে গেছেন। আমি জানিনা আমি আমাদের সেই লাইনার কোন পর্যায়ে আছি। হতে পারে আমি লাইনের শেষের দিকে আছি অথবা হতে পারে আমি লাইনের প্রথমের দিকে আছি। আমি লাইনের কোন পর্যায়ে আছি এটা কোন ভ্যালু রাখেনা কারন এই লাইন এক সময় না এক সময় শেষ হয়ে যাবে। সময় কখনো হোল্ড হয়ে থাকে না। আমাদের আগের এমন অনেক লাইন শেষ হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যাবে। আজ যে শিশুটি আমাদের কোলে যেই শিশুটিও একদিন অন্য একটি শিশুকে তার স্থান ছেড়ে দিয়ে যাবে আর তার বহু আগে আমরাও অন্যকোন শিশুকে আমাদের স্থান ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।