ধরুন একটা মেয়েকে আপনার প্রচন্ড ভালো লাগে এবং তার প্রতি আপনি দিওয়ানা হয়ে গেলেন। দিন রাত এক করে শুধু তার কথা ভাবতে থাকলেন। তাকে ভেবে যেন সমস্ত গান গুলো আপনার হৃদয়ে বাজতে শুরু করলো। তাকে ঘিরে আপনার সকল ভাবনা। দিন-রাত কাটতে লাগলো তার অনুভবে। আপনার কাছে মনে হয় তার থেকে মিস্টি আর সুন্দর কেউ হয়না। তার থেকে সুন্দর করে কেউ কথা বলে না; সুন্দর করে কেউ তাকায় না। সব পোশাকেই তাকে সুন্দর লাগে। যখন সে আপনার সামন দিয়ে যায় তখন যেন আপনার মনে দমকা হাওয়া দোলা দিয়ে যায়। 

love

কখনও তার সাথে কথা হলে সেই দিনটা আপনার বেস্ট দিন হয়ে যায়। আপনি তার অনুরাগে এতটাই মত্ত থাকেন যে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা গুলোও তাকে ঘিরে পরিবর্তন হতে থাকে। আপনি তাকে আপন করে পেতে চান কারন সে খুবই মায়াবি, তার মত সুন্দর কেউ হয় না। আপনি ভাবেন, যে তাকে দেখবে সেই তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাবে কারন; তার মত সুন্দর করে কেউ হাসে না; তার মত মিস্টি করে কেউ কথা বলে না। তাকে পেলে আপনার পরবর্তী জীবনে প্রশান্তির শীতল বাতাস বইতে থাকবে। আপনি হবেন সবচেয়ে সুখী মানুষ; কারন সে খুবই charming সে সবাইকে উজ্জিবিত করে রাখে। তার কথায় যেন জাদু আছে; যখন সে কথা বলে তখন মিস্টি করে হেসে কথা বলে। তার eye contact আপনাকে পাগল করে দেয়। মাঝে মাঝে যখন সে চোখের ইশারায় কথা বলে তখন আপনি কোথায় যেনো হারিয়ে যান। আপনি ভাবেন শুধু সমুদ্রসৈকতে বসেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিবেন তার হাত ধরে। আপনার এই ভাবনা মিথ্যা নয় বরং একদম বাস্তব এবং সত্যি। মানুষ আসলেই এতটা সুন্দর হতে পারে। এতটা প্রেমময়ী হতে পারে। পাগল করে দেয়ার মত হতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা নারীদের এইভাবেই সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকটা নারীই কারো না করো দৃষ্টিতে এতটাই সুন্দর; যতটা আপনি আপনার পছন্দের কোন নারীকে কল্পনা করেন। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, প্রতিটি মানুষেরই ভালো, সুন্দর, মিস্টি গুনের বিপরীতে আর একটি ভয়ংকর গুন রয়েছে। যা ততটাই তিক্ত যতটা সে মিস্টি। আর এই গুণটিও আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। এই গুনগুলো নিয়েই মানুষ। আমি আবার আপনাকে আপনার সেই কল্পনার মানুষটির কথা ভাবতে অনুরোধ করছি; কিন্তু এবার একটু ভিন্ন ভাবে। আপনার সেই কল্পনার প্রেমময়ী যে সব সময় মিস্টি করে কথা বলে, কেমন লাগবে যদি একদিন অনেক কর্কস ভাষায় কথা বলে? জ্বী সেই মিস্টি মেয়েটিই যে সব সময় হেসে হেসে কথা বলে; যদি একদিন মুখ কালো করে কথা বলে? রাগে ফেটে পড়ে? কখনো কঠোর ভাবে ধমক দেয় কিংবা অপমান করে বসে? কেমন লাগবে যদি একদিন আপনাকে সবার সামনে বাজে ভাবে হেয় করে?

তখনো কি আপনার তাকে আগের মত ভালো লাগবে? যদি আপনার ততটা আত্মমর্যাদা থেকে থাকে। আমি জানি কিছু মানুষ বলবে আমার তার রাগী চেহারাটাও সুন্দর লাগে। সে যখন রাগ করে তখন তাকে আরো সুন্দর দেখায়। তার ধমক গুলো একেকটা প্রেমের তীর, যা আমার হৃদয়ে এসে বিঁধে যায়। জ্বী এতটা মোহিত হওয়াও স্বাভাবিক। নারীরা এতটাই মোহিত হবার মতই সৃষ্টি। কিন্তু এর বিপরীতেও একটি ডায়মেনশন রয়েছে তা হলো অধর্য্য। এত এত ভালোবাসা; এত এত সেক্রিফাইস এর পরেও শহর জুড়ে শত শত ঘর ভাঙ্গার কান্না পাওয়া যায় আর তার বেশিরভাগই ঝগড়ার কারনে, কর্কশ আচরনের জন্য। তাই ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কল্পনায় সুখের রাজ্যে স্থায়ী হওয়া ব্যাক্তিরাও একসময় ধর্য্য হারিয়ে ফেলেন এবং হার মেনে বসেন। মানুষকে এই ভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে; যে মানুষ একসময় ধর্য্য হারা হয়ে যাবে।

আমরা যখন ভালোবাসতে শুরু করি তখন মানুষের ঐ ডায়মেশনটা দেখতে পছন্দ করি যেটা সুন্দর। আমরা কখনই নেতিবাচক জিনিসটা কল্পনা করতে ভালোবাসিনা। আমরা সবাই মিস্টির দোকানে বসে পছন্দের সুন্দর সুন্দর মিস্টি গুলো দেখতে এবং তার স্বাদ নিতে বড্ড ভালোবাসি কিন্তু সেই আমাদেরকে যদি ঐ মিস্টির কারখানায় নেয়া হয়, আমার তখন সেখানে থাকতে চাইবো না; কারন এতটাই বাজে গন্ধ সেখনে তৈরি হয়। একই বিষয় প্রতিটি জীবিত প্রাণীর ক্ষেত্রে। প্রতিটি ভালোর বিপরীতে রয়েছে মন্দ। প্রতিটি সুন্দরের বিপরীতে রয়েছে অসুন্দর। প্রতিটি হাসির পছনে রয়েছে কর্কশতা। আমাদের কল্পনার রাজ্য যখন সুন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে তখন আমাদের ভিত্তিটা এতটাই নড়বড়ে হয়ে যায় যে, সামান্য আশাহত হলেই তা দুমড়ে মুচড়ে যায়। তুমি তো অনেক সুন্দর ছিলে এখন এমন কথা বলছো কেনো? তোমার থেকে এতটা রুড আচরন আশা করিনি। বাস্তবতা হলো মানুষ কখনই শুধু সুবাস ছড়িয়ে যেতে পারে না। মানুষের বদহজম হবার মত কখনো কখনো দূষিত আচরনও করে বসে। এই দুই ডাইমেনশন নিয়েই মানুষ।

যাকে বেশি ভালোবাসা হয় তার দেয়া কষ্ট খুব সহজে মেনে নেয়া যায় না। কারন দুরের কেউ যদি আঘাতও করে তবে তাকে পাল্টা আঘাত করে রাগ কমানো যায় কিন্তু ভালোবাসার কাউকে আঘাত করে প্রতিশোধ নেয়া যায়না। বরং সেই কষ্ট গুলো অন্তরে জমা হয়ে আস্তে আস্তে বিষক্রিয়ায় পরিণত হয়; যা একসময় ভালোবাসগুলোকে মেরে ফেলে; তখন তার সেই মিস্টি হাসি আর মিস্টি লাগে না মনে হয় এ যেন এক ধোকা। সচেতন মানুষরা কখনই এক সাইড ভেবে সামনে এগোয় না, মোহে পড়ে যায় না। কিন্তু মানুষ তার মনের বিরুদ্ধে পেরে উঠে না। মানুষের মন তার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রন নিতে পারে; বার বার এক জিনিস ভাবিয়ে পাগল করে দিতে পারে। সহজে মন কে নিয়ন্ত্রন করা যায় না যত সহজে মন মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়।

আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা আমাদের রব, তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন; তিনি জানেন আমাদের বৈশিষ্ট; আমরা কি করতে পারি, কি করতে পারিনা। আমার আমাদের মনকে, মস্তিষ্ককে সবসময় নিয়ন্ত্রন করতে পারবোনা বিধায় আমাদের কে ঐ সব হারাম থেকে দুরে থাকতে বলেছেন, যেখানে গেলে মন, মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায়; যেমনঃ নারী, মাদক। সেই সাথে আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের দ্বীনদার নারী/পুরুষকে বিবাহ করতে বলেছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, দ্বীনদার নারী বা পুরুষের কোন খারাপ গুন নেই, না বরং প্রতিটি মানুষেরই ভালো-খারাপ গুন রয়েছে। তবে দ্বীনদার পুরুষ নারীর আলাদা কি আছে যার জন্য আল্লাহর রাসূল সাঃ এ কথা বললেন? সেটা হলো আল্লাহ ভীতি এবং আমানতদারিতা। দ্বীনদার মানুষও রাগ করে, কর্কশ ভাষায় কথা বলে, গুনাহ করে কিন্তু এত কিছুর পরও সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, ভুল শোধরানোর জন্য আত্মসমালোচনা করে, গোপনে ভুল গুলোর জন্য লজ্জিত হয়, কাঁদে মাফ চায়, ভুল শিকার করে। দ্বীনদার ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে তার করা ওয়াদা রক্ষা করতে আপ্রাণ চেস্ট করে চলে, যা ঐ ব্যাক্তির থেকে ভালো যে কিনা তার রবে সাথে করা ওয়াদা প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করে চলছে। যে ব্যাক্তি আল্লাহর আমানত রক্ষা করতে পারেনা সেই ব্যাক্তি মানুষের আমানতও রক্ষা করতে পারবেনা এটাই অধিক যুক্তি সংগত। এ জন্যই আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন আমরা যেন তাদেরকেই পছন্দ করি যারা আল্লাহকে পছন্দ করে। আল্লাহর সাথে যাদের সম্পর্ক ভালো। হারামে ঢুবে আমাদের মন যাতে ছন্নছাড়া না হয়ে যায়, বরং আমাদের মন যেন আমাদের রবের দিকে থাকে; যিনি আমাদের বিক্ষিপ্ত মনকে পুনরায় গোছানোর সুযোগ করে দিবেন এবং আবেগ নিয়ন্ত্রিত ভাবে জীবন যাপন সহজ করে দিবেন। তখন ভালোবাসার বিপরীতে ক্রোধ থাকলেও আল্লাহ ভীতির জন্য তা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ভীতিহীন জীবনে ভালোবাসার বিপরীতে ক্রোধ, অহংকার জয়লাভ করে জীবনকে বিষিয়ে দিবে। আমরা আল্লাহর কাছে এমন ভালোবাসা চাই যা ক্রোধের বিপরীতে বিজয়লাভ করবে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে।