২০২৩ সালে এসে এ কথা বলতে আর দ্বিধা করছিনা যে, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক গুলো আর ইসলামি নেই। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। বাংলাদেশের মানুষ ইসলামী ব্যাংক বলতে যা বুঝে তা হলো IBBL বা Islami Bank Bangladesh Limited. এই ব্যাংক গুলোর পক্ষে এক সময় মানুষের সামনে ফাইট করেছি, বিশেষ করে যখন ইউনিভার্সিটিতে ব্যাংকিং এর ক্লাশ গুলো করতাম তখন আমার বন্ধু বান্ধব, এমনকি টিচারদের সাথেও ডিবেইট করেছি। প্রতিক্ষেত্রেই আমি চেস্টা করতাম ইসলামী ব্যাংক গুলোর পক্ষনিয়ে পজেটিভিটি ছড়ানোর। সেই সময় ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে আমার যতটা ভালো ধারন ছিলো তার সব আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গিয়েছে এই ২০২২-২৩ সালে এসে।

banking

ইসলামী ব্যাংক নিয়ে যা বলতে চাচ্ছি তা স্পষ্ট ভাবেই বলি, ইসলামী ব্যাংক এখন আর ইসলামী ব্যাংকিং মোতাবেক বা ইসলামী শরিয়আ মোতাবেক চলছে না। অন্তত যিনি ইসলামী মুয়ামালাত ও সুদ সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা রাখেন তিনি বুঝতে পারবেন যে, সুদ দেওয়া ও সুদ নেওয়া হারাম ও তা কতটা ভয়াভহ রকমের গুনাহ। ইসলামী ব্যাংকের মুলনীতি ছিলো তারা সুদ দিবে না এবং সুদ নিবে না কিন্তু তারা এই নীতি মোটেই ফলো করছে না। আগে কতটুকু ফলো করতো তাও এখন যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।

একদম নতুন বছরের শুরুতেই জানতে পারলাম, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মার্কেটে হারাম বন্ড ছেড়ে ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিরল সুবিধার আওতায় ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এই ব্যাংক, অন্য ইসলামী ব্যাংক গুলো প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার মত ঋণ নিয়েছে, যেখানে তাদের সুদ দিতে হবে ৮.৭৫% হারে। যা সম্পুর্ণ ভাবে ধর্মপ্রান গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা। কোন ব্যাংকে ১০০% সুদ মুক্ত করা সম্ভব নয় যতদিন না কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ মুক্ত হচ্ছে, এই কথা বলে পূর্বে যে সামান্য সুদের কথা বলা হতো তার যুগ শেষ হয়েছে। কারন এখন ইসলামী ব্যাংক গুলোর মুলধনের উল্লেখ যোগ্য অংশই সুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। এই সুদের টাকা থেকেই যে আয় হবে তা দিয়েই পরিচালিত হবে ব্যাংক এবং পরিশোধ করা হবে গ্রাহকের আমানত। এবং এই টাকা কে ব্যবহার করেই পরিশোধ করা হবে এর সুদ। তাছাড়া যারা ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করাকে হালাল বলতে চাইতেন তারা এখন নতুন কি যুক্তি দিবেন তা দেখার পালা। 

যাইহোক. যারা বর্তমান সময়ের খবরা খবর রাখেন তারা জানেন যে, ইসলামী ব্যাংক গুলো বর্তমানে তারল্য সংকটে পড়েছে, অর্থাৎ তারা অনেকগুলো টাকা ঋণ দিয়ে দেয়ায় গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বিভিন্ন নিউজ থেকে জানা যায় যে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার মত ঋণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেয়ায় এই তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। যার বেশিরভাগই প্রতারণামুলক ভাবে ব্যাংক থেকে বের করে নেয়া হয়েছে। আর তাতে ব্যাংক গুলোর মালিক পক্ষের হাত রয়েছে এমন কি কেন্দ্রিয় ব্যাংক এগুলো দেখেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। (এই তথ্য গুলো পত্রিকার প্রথম কলামেই পেয়ে যাবেন।)

পরিশেষে, ইসলামী ব্যাংকে টাকা লেনদেন করা যাবে কিনা সেই ডিবেটে না গিয়ে আমি বরং এমন কথা বললো, নিজের টাকা সিকিউর কোথাও রাখুন। সুদ যেন না খেতে হয় এবং দিতে হয় সেই দিকে সচেতন থাকুন। ইসলামী ব্যাংক দেখলেই আবেগি হবার কারন নেই।