ভার্সিটিতে সে সময় আমি থার্ড ইয়ারে। আমি আমার একজন শিক্ষককে এই প্রশ্নটা করেই বসলাম। তিনি ছিলেন ভার্সটিতে আমার অন্যতম পছন্দের শিক্ষক এবং তার সাথে আমি মোটামুটি ফ্রি ছিলাম বলেই প্রশ্নটা তাকে করেছিলাম। প্রশ্নটা মোটামুটি এরকম ছিলো, স্যার আমি বেশিরভাগ সময়ই গুগল করেই সব কিছু পড়ে নেই, কোন চ্যাপ্টার না বুঝলে ইউটিউবে ভিডিও দেখে নেই, আমাদের কাছে সব তথ্য তো এভেইলেবল তাহলে এত ক্লাস করার কি দরকার?
সত্যি কথা বলতে তিনি এই প্রশ্ন শোনার পর রাগ না করে আমাকে সুন্দর করে একটা উত্তর দিয়েছিলেন যা আমার ক্লাসে উপস্থিত হবার ফিলোসফিকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছিলো। এর পর আমি যতটা পেরেছি নিয়মিত ক্লাস করেছি। আমি তাকে যে প্রশ্নটি করেছিলাম এই প্রশ্নে তার রাগ না করা কোন কারন ছিলো না (যদিও তিনি করেননি) । আমার এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত এমন হতে পারতো, সব যেহেতু গুগল করে পাস তবে ভার্সটিতে আসছিস কেনো? ইউটিউব দেখে পড়াশুনা করে পন্ডিত হয়ে যা।
আমি জানি আমার এই প্রশ্ন অনেক ছাত্র ছাত্রীর মনে রয়েছে বিশেষ করে যারা আমার মত অনলাইন ঘেটে দ্রুত প্রশ্ন সলভ করার টেকনিক জানেন। আমি বেশির ভাগ সময়ে Edx.org বা Coursera.com থেকে সেমিস্টারের কোর্স রিলিভেন্ট কোর্স করে নিতাম। কোন ম্যাথ সলভ করতে না পারলে, কোন না কোন ইডুকেশন ওয়েব সাইটে তার সলুশন পেয়ে যেতাম। যদি সে গুলোর কোনটা পেইড হতো তবুও কোন না কোন মেথড বের করতাম। এবং এভাবেই পরিক্ষার আগেই আমার সম্ভব্য সকল প্রশ্ন সলভ করা থাকতো। আর তাই আমি ভাবতাম ক্লাসে টিচার যা পড়ায় তা গুগল মামা অনেক সহজ করে বুঝাতে পারে। ক্লাসে গিয়ে কি হবে? ক্লাসে যা পড়াবে তা আমি গুগল করে পড়ে নিবো।
কিন্তু সেই দিন আমার সেই শিক্ষকের উত্তর আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছিলো। তিনি যেমনটা বলেছিলেন, গুগল ইউটিউব ও অন্য সব ফ্রি কোর্সের চেয়ে আমি যদি বেশি তথ্য তোমাদের দিতে না পরতাম তবে তোমরা ইউনিভার্সটিতে আসতে না। তোমরা যে রিসোর্স গুলো দেখে পড়ো আমিও সেই রিসোর্স গুলো চেক করি, আর আমার কাছে সেই ফ্রি রিসোর্স গুলোর থেকেও বেশি তথ্য রয়েছে। আমি তোমাদের গুগল ইউটিউবের থেকে সব সময় একধাপ এগিয়ে থাকি, তোমরা যে আর্টিকেল গুলো পড়ো সেগুলো কয়েক বছর আগের করা, আর আমার কাছে আছে আবডেট তথ্য।
এর পর আরো তিনি যে কথা গুলো সেদিন বলেছিলেন যেগুলো আমি এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। তিনি বলেছিলেন আমরা তোমাদের আর্গানাইজড মডিউল দেই, গুগলে তোমরা যা পাও সেগুলো বিক্ষিপ্ত। সত্যি তাই, আজ গ্রাজুয়েশন শেষ করার ৩ বছর পর যখন ব্যাংকিংয়ের ছোট একটা বিষয় নিয়ে গুগল করছিলাম তখন খেয়াল করে দেখলাম আমি যে তথ্য গুলো চাচ্ছি তা আসলেই আর্টিকেল গুলোতে নেই। শেষে আমি বাধ্য হয়ে আমার ক্লাস মেটেরিয়ালস গুলো চেক করলাম। বাস্তবতা হচ্ছে আমরা ক্লাসে প্রাথমিক সকল তথ্য পেয়ে যাই বলেই সেই কি-ওয়ার্ড গুলো ব্যবহার করে সার্চ করে এর সম্পূরক কিছু তথ্য বের করতে পারি। আর সেই তথ্য গুলো আমাদের তখনই সহযোগিতা করে, যখন আমরা সেই বিষয়টা সম্পর্কে অলরেডি ক্লাস থেকে কিছু না কিছু জেনে এসেছি।
বইয়ে সব প্রশ্নের ব্যাখ্যা থাকার পরেও আমাদের এজন্যই শিক্ষকের নিকট যাবার দরকার হয় যে, তিনি আমাদের সে গুলো অর্গানাইজ করে পড়াবেন, আমাদের চাহিদা মত অতিরিক্ত তথ্য এড করে বুঝাবেন। যে কাজটা গুগল করে কখনই হয় না, গুগল বুঝতে পারে না আমরা কি চাই, গুগল শুধু তার ইন্ডেক্সে যা থাকে তাই শো করে। টিচাররা আমাদের চাহিদা বুঝতে পারেন সে অনুযায়ী লেকচার দিতে পারেন। ক্লাস করার বড় এডভান্টেজ হলো শিক্ষকরা রিয়ালটাইম তথ্য দিতে পারেন যা হয়ত অনেক ওয়েবসাইটে আবডেট করা নেই। আরো মজার ব্যপার হলো বেশিরভাগ আর্টিকেল বিদেশি লেখকদের লেখা, তাদের অনেক অবজার্বেশন আমাদের দেশের পার্সপেক্টিভে কাজে লাগে না। এর চেয়ে বরং আমাদের জানা দরকার বাংলাদেশের পার্সপেক্টিভে বিষয়টা কেমন হবে।
আমি বলছিনা সকল শিক্ষক ততটা স্মার্ট, তবে আপনার শিক্ষক যদি একজন স্মার্ট শিক্ষক হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার অনেক প্রশ্ন গুগল না করে সরাসরি সেই শিক্ষককেই প্রশ্ন গুলো করে জেনে নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এর ফলে একদিকে যেমন আপনার শিক্ষকের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো হবে তেমনি ঐ প্রশ্নের উত্তর গুলো দীর্ঘদিন মনে থাকবে এবং বাস্তব জীবনে গিয়ে কাজে লাগবে।
0Comments
Post a Comment