subjugation

ব্যাংক লোন মানে পরাধীনতার বলতে এটা বুঝাচ্ছি না যে, ঋণ নিলে আপনাকে সুদ দিতে হবে ৷ সুদ দেয়া পরাধীনতা নয়, এটা একধরনের ডিল / চুক্তি ৷ অর্থাৎ ধরুন আপনাকে ব্যাংক ১০ লক্ষ্য টাকা ধার দিবে যার বিনিময়ে ৯% হারে সুদ নিবে এবং এই ঋণের মেয়াদ হবে ৬ বছর ৷ এটা হলো একটা চুক্তি এটাকে আমি পরাধীনতা বলছি না ৷ পরাধীনতা বলছি এই চুক্তির সাথে জুড়ে দেয়া কোন ব্যাক্তি স্বার্থ বা কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ বা কোন দেশের স্বার্থ কে ৷ ঋণের পরিমান যত বাড়বে এই স্বার্থের মাত্রাও ততো বাড়বে এবং এসব স্বার্থ ঋণের সুদের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে থাকে ৷ যেমন আপনি সুদ পরিশোধ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও আরো ২ বছর বেশি সময় নিতে পারেন তাতে সমস্যা নেই ৷ কারন সুদতো আপনি পরিশোধ করতে বাধ্য, বেশি দেরি করলে জরিমানা দিবেন। আর সেটা তারা আদায় করতে পারবে যদি একবার তাদের স্বার্থ পুরন হয়ে যায় ৷

বিষয়টাকে আমি জটিল করতে চাই না, কয়েকটা উদাহরন দিচ্ছি সহজ করতে -

১। কবির মিয়া একজন ব্যবসায়ি৷ ব্যবসার কাজে প্রায়ই ব্যাংক লোন নেন৷ ডিসেম্বর ক্লোজিং এর আগে জরুরি ৫ লক্ষ টাকার দরকার দেখে ব্যাংকের দরজায় দাড়ালেন৷ ব্যাংক ম্যানেজার সহজ সুদে ঋণ দিতেও রাজি হলেন এবং পেপার্স রেডি করতে বললেন৷ পেপার্স যখন সব প্রায় রেডি তখন ব্যাংক ম্যানেজার কবির মিয়াকে ডেকে বললেন আপনার প্লটের দুইটা প্লট পরে আমার জামাইয়ের প্লট, আপনাদের রাস্তা দিয়ে তাদের বের হবার রাস্তা করে দেন, ওদেরও উপকার হয় আর আমি লোনটাও দ্রুত পাবার ব্যবস্থা করে দেই৷ এদিকে ডিসেম্বর মাস শেষের পথে নতুন ব্যাংকে গিয়ে ঋণ ইস্যু করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, আবার কবির সাহেবের ব্যাক্তিগত প্লটের সাথে ব্যাংক লোনের বিষয়টা বেমানান৷ এক সকালে ব্যাংক ম্যানেজার নিজেই তার জামাই সহকারে কবির সাহেবের বাড়িতে আসলেন রাস্তার বিষয়টা ফয়সালা করতে৷ ঋণ পেতে চুক্তি গিয়ে দাড়ালো রাস্তা দেয়া না দেয়ায়৷ ঋণ নিলে সুদ তো কবির সাহেবকে দিতেই হবে এবং সেটা ব্যাংক ঠিকিই আদায় করবে৷ কিন্তু একটা ভিন্ন স্বার্থ যার জন্য ঋণ আটকে থাকলো কবির সাহেবের৷

আসুন একটু বড় করে ভাবি এবার…

২। সাইদ আনোয়ার সাফি, বড় একটা সুপার শপ কোম্পানির মালিক৷ শহরের নামি দামি জায়গায় তার অনেকগুলো সুপার শপ রয়েছে৷ ব্যবসা চালাতে অনেক সময় জরুরি লিকুইড মানির প্রয়োজন পড়ে৷ সিজেনে কিছু পন্য কিনে স্টক করতে পারলে, শপে চাহিদা মত যোগান দেয়া যায় ৷ ব্যাংকের দারস্থ হয়েছেন ১০ কোটি টাকার জন্য৷ ব্যাংকের জন্য সাফি সাহেবরা গোল্ডেন কাস্টমার কারন তাদের মত বড় বড় পার্টিদের সুদে ব্যাংক চলে৷ টাকা পেতে সাফি সাহেবের বেগ পেতে হলো না, সুদের চুক্তিও সহজ মানে সবাই যা দেয় তাই [ইয়ে মানে ব্যাংক যা চাপিয়ে রেখেছে তাই] শুধু এমডি সাহেব বলেছে তার কোম্পানির পন্য গুলো যেন একটু আপনার সুপার সাথে এভেইলেবল থাকে৷ আপনার জন্য এমডি স্যার ভালো রেটেও মাল দিবেন বলেছেন৷ (ব্যাংকের মালিকের নিজের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে) সাফি সাহেব লোন পাবেন, সুদও দিবেন কিন্তু লোন পেতে তার শপে ঐ xyz ব্যাংকের এমডির কোম্পানির কিছু পন্য সেল করতে হবে৷

এই পর্যন্ত সহজেই চিন্তা করা যায়, কঠিন বিষয় আসে যখন আমরা একটা দেশের লোন ইস্যুর পিছনের স্বার্থ চিন্তা করি…

ধরুন XYZ একটা দেশ৷ দেশের অর্থনৈতিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে দেশের সরকারগন(যখন যিনি ক্ষমতায় আসেন) সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বাজেট পলিসি হবে ঘাটতি বাজেট৷ অর্থাৎ দেশের মোট প্রত্যাশিত আয়ের বেশি বাজেট ঘোষণা করে অতিরিক্ত সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ হিসাবে নিয়ে বাজেট পুরন করা হবে৷ এই পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে যখন XYZ দেশটি লোন ইস্যু করে তার পরিমান হয় কয়েক বিলিয়ন ডলার পরিমান৷ এছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ যেমনঃ নির্মান, এবং বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক ভারসাম্য রাখতে তারা লোনের আশ্রয় নেয়। এতে মোটা দাগে ঋনের সুদ পরিশোধ করা দেশটার অন্যতম বড় ব্যয় যা আবার বাজেট থেকেই মেটানো হয়। মানে লোন করে সুদ মেটানো আরকি। এই XYZ দেশ যখন ঋণ নেয় তখন এর অংক হয়, কয়েক শত মিলিয়ন ডলার বা কখনো বিলিয়ন ডলার। আমি আশা করছি আগের দুইটি উদাহরনের আলোকে এখন প্রেডিকশন করতে পারছেন এত বড় লোনে কত বড় স্বার্থ জড়িত হতে পারে ৷ জ্বী এই পর্যায়ে মোটা অংকের সুদের পাশা-পাশি গোপন যে স্বার্থ গুলো থাকে সেগুলোই হলো ভয়াবহ রকমের পরাধীনতা যেমনঃ

1. ঋণ গ্রহীতা দেশের মার্কেটে অধিপত্য বিস্তার করা।
2.           '' দেশের অভ্যন্তরিন পলিটিক্সে হস্তক্ষেপ করা।
3.            '' দেশেকে জিও পলিটিক্সে অংশগ্রহনে বাধ্যকরা।
4.           '' দেশের মুল্যবোধ পরিবর্তনে বাধ্য করা। (যেমন নাস্তিক্যবাদ বা LGBTQ কে সমর্থন দিতে বাধ্য করানো সে গুলোকে পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে এনে পড়ানো ইত্যাদি)
5.           '' দেশের মাধ্যমে ধর্মীয় ও বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করা।
6. ঋণ গ্রহীতা দেশের ল্যান্ডে সামরিক ঘাটি বানানো।
7.          '' দেশের ইম্পোর্ট-এক্সপোর্টে নাক গলানো। ইত্যাদি

এক কথায় সেই দেশকে এক অঘোষিত দাস বানানো। যা বলা হবে তা করবে, যা থেকে নিষেধ করা হবে তা থেকে বিরত থাকবে। এবং এ বিষয়ে তারা শতভাগ সফল হয়ে থাকে, কারন যার একবার ঋণের দরকার হয় তার বার বার ঋণের দরকার হয়।