যখন কোন ব্যাক্তি বা আলেমের সমালোচনা করা হয়, বা তার কোন ভুল ব্যাখ্যাকে স্পষ্ট করে দেয়া হয় তখন অনেকেই বলেন, সবাই যদি ভুল হয় তবে সঠিক কে? আপনাদের দৃষ্টিতে তো কেউ সঠিক নয় সবাই ভুল। এর উত্তরে আমি যা বলি...
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এমন প্রশ্নের সম্মুখিন আমি প্রায়ই হই আর তখন তাদের প্রতি আমি পাল্টা প্রশ্ন করি আপনারা কি সবাইকে ১০০% সঠিক মনে করেন? এমন ভাবেন কারো কখন কোন ভুল হবে না? আচ্ছা যদি মনে করেন মানুষের ভুল হতে পারে, তবে কেন এটা মেনে নিতে কষ্ট হয় যে, আপনার সেই পছন্দের সেই ব্যাক্তিত্বের বা আলেমেরও ভুল হতে পারে?
তখন তাদের কেউ কেউ কথা ঘুরিয়ে ফেলে আবার কেউ কেউ পুনরায় প্রশ্ন করে, তবে বলে দিন কে সঠিক?
বেশিরভাগ মানুষের মাঝে এই বৈশিষ্টটি খুবই স্পষ্ট যে, তারা তাদের ভুলকে স্বীকার করতে চায় না। সব সময় চায় তার পক্ষে কোন না কোন যুক্তি দাড় করাতে। যদি বুঝতে পারে সে ভুল তবুও যতক্ষন পারা যায় তর্ককরে নিজেকে সঠিক প্রমান করতে চেষ্টা করে যায়। ঠিক একই বিষয়টিই ঘটে কারো পছন্দের আলেমের বেলায়। তারা চায় না কেউ তাদের ভুল ধরুক। কারন ঐ আলেমদের কোন ভুল প্রকাশ পেলে লজ্জায় তাদের মাথা কাটা যায়। তারা মনে করেন তারা ভিন্ন মতাদর্শীদের কাছে হেরে গেলেন। অথবা ভিন্ন মতাদর্শীদের কাছে তারা লজ্জিত হবেন। অথচ সত্য মেনে নেয়ার মাঝে কোন লজ্জা নেই বরং মিথ্যার মাঝে থাকাটাই লজ্জার। কারো ভুলে আমাদের কোন লজ্জা নেই বরং কারো ভুলের পক্ষে ছাফাই গাওয়াতেই প্রকৃত লজ্জা।
এই বিষয়টিই সংক্ষিপ্ত ভাবে ব্যাখ্যা করবো আজকের পোস্টে। আশা করি বিষয়টি বুঝা আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিবেন। আমিন
এই পৃথিবীতে কোন মানুষই দ্বীন বুঝার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নন একমাত্র রাসূল সাঃ ছাড়া। রাসূল সাঃ মানুষ হওয়া সত্তেও এটা সম্ভব হয়েছে কারন তিনি দ্বীনের জ্ঞান সরাসরি ওহীর মাধ্যমে পেতেন এবং কোন ভুল করলে সয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তা সংশোধন করে দিতেন। এই বিশেষ গুন তারপরে আর কোন মানুষের নেই, তাই কোন মানুষ ১০০% সঠিক হতে পারে না। তাছাড়া মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যায়, নিজের নফসের ধোকায় পড়ে যায়, এমনকি নিজেদের সীমাবদ্ধতার জন্যও সকল কিছু সঠিক ভাবে করতে পারেন না।
আপনি এটা জানেন যে, প্রতিটা মানুষ সমান দক্ষ নয়, কেউ শক্তিশালী কেউ দুর্বল, কেউবা জ্ঞানী আবার কেউ অংক কষতে পারে না, কারো স্মরণশক্তি প্রখর বা কারো দুর্বল, এমন অনেক সীমাবদ্ধতা মানুষের রয়েছে। আর এসবের সাথে রয়েছে দুনিয়াবি চাহিদ, সাংসারিক চাহিদা, জৈবিক চাহিদ, পারিবারিক সীমাবদ্ধতা, সামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন মতবাদের ভিতরে বেড়ে উঠা, প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষকের প্রভাব ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই এতসব কিছুর মধ্যদিয়ে কেউই ১০০% নিরপেক্ষ থেকে ১০০% সঠিক দ্বীন মানুষকে প্রদান করতে পারে না।
যে ব্যাক্তি এশিয়া মহাদেশে বেড়ে উঠেছে সে আরবদের মত করে ভাবে না, আর আরবরাও আমাদের মত করে ভাবে না। যার বাবা পীর ছিলো সেতো চেস্টা করবে পীরতন্ত্রকে হালাল বলার। আবার যে ব্যাক্তি রাজনীতি ভালোবাসে সে কুরআনের আয়াতের তাফসীর তার দলের পক্ষে করা চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। আবার যারা নিজেদের কে সুন্নাহর অনুসারি বলে তারাও তাদের সকল কাজ কর্মকে সুন্নাহ সম্মত মনে করেন, আর এটা আদতে এত সহজ নয় যে, সবার সবকিছু ১০০% সঠিক ভাবে চলবে। এটা আশা করা বোকামি।
তাহলে সমাধান কি? এর একটিই সমাধান তা হলো রাসূল সাঃ এর দিকে ফিরে যাওয়া। এবং সঠিক টা করার প্রচেষ্টা করে যাওয়া। নিজে এলেম অর্জন করার চেস্টা করা এবং আলেমদের প্রতিটি কথা রাসূল সাঃ এর মতবাদের সাথে মিলে কিনা যাচাই করা। শুধু যুক্তি শুনে কোন কিছু মেনে না নেয়া, বরং কুরআন হাদিসে স্পষ্ট সকল কিছু মেনে নেয়া। আমাদের জন্য যা দরকার তা স্পষ্ট এবং সেগুলো আল্লাহ আমাদের জন্য সংরক্ষণ করেছেন। এর অতিরিক্ত দরকার নেই এবং এর কমকরারও দরকার নেই।
আমাদের সমস্যা হলো আমরা যাকে ভালোবাসি তার সবকিছুকেই ভালোবাসি। এই সিমাবদ্ধতার জন্য তার ভুল গুলোকে ধরতে পারি না, আবার অন্য কেউ ধরে দিলেও তাতে কষ্ট হয়। বরং আমাদের উচিত সকল হক পন্থি আলেমদের ভালোবাসা এবং কারো অন্ধ অনুসরন না করা। তারা যে সঠিক কথা বলেন তা মেনে চলা এবং তাদের ভুল কিছু প্রকাশ পেলে তা থেকে সতর্ক থাকা।
পরিশেষে, আমরা আর কখনই কোন পরিপূর্ণ দ্বীনদারকে পাবো না, কারন দ্বীন পালনের ব্যাপারে যিনি আমাদের আদর্শ, যার মাঝে ছিলো ১০০% দ্বীন তিনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়েছেন, তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাঃ। আমরা রাসূল সাঃ কে অনুসরন করার মাধ্যমে তার মত হবার চেস্টা চালিয়ে যাবো কিন্তু কখনই তার মত একনিষ্ট হতে পারবো না। কারন আমাদের মধ্যে তিনিই আল্লাহ কে বেশি ভয় করতেন। তাই বর্তমান আলেমদের কোন নির্দিষ্ট একজন কে বেছে নিয়ে তাকে পুরোপুরি অনুসরন করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বরং প্রচেষ্টার সাথে সত্যকে বার বার খুঁজে নেয়া এবং ভুল থেকে যতদুর সম্ভব দুরে থাকা।
0Comments
Post a Comment