মুসলিম বাঙালি হিসাবে আমাদের ইতিহাস হাজার বছরের পথে, সেই ১২০০ সালের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি বাংলা দখলের পর থেকে এই জনপদের মানুষের মাঝে ব্যাপক ভাবে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী, মুসাফির ও দাওয়াতীকাজের জন্য যারা আরব অঞ্চলথেকে এই জনপদে এসেছিলো তাদের মাধ্যমে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু এর পর থেকে এই বাঙালী মুসলিমদের যে সামাজিক মুল্যবোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসন মানার আগ্রহ ছিলো তা মনে হয় এই শতাব্দিতে এসে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সামাজিক অবক্ষয়তা এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। জন্মগত সূত্রে মুসলিম এবং সাংস্কৃতিক কিছু ক্ষেত্রে আমাদের এই দ্বীন এখন টিকে আছে আমাদের ধর্ম হিসাবে। মুসলিম হিসাবে গর্ববোধ করার কথা ভাবে এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যদিও বিগত দশক গুলোর তুলনায় বর্তমান সময়ের আলেমরা ব্যাপক দাওয়াতী কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে। সমাজ থেকে বিদায় হয়েছে শত শত বিদাআত আর শিরকের মত ভয়াবহ গুানহ। যদিও এই বিষয়গুলো এখনো মুসলিম হিসাবে সচেতন মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিশেষ করে যারা নিজে থেকে কোন আলেমের ফেইসবুক পেইজ বা ইউটিউব চ্যানেল ফলো করে রাখেন। যারা নিজের তাগিদে কোন দাওয়া সেন্টারে জান, বা কোন মাদ্রাসায় গিয়ে দ্বীন শিক্ষা করেন। সত্যি কথা এটাই শুধু মাত্র যারা প্রচেষ্টা করছে শুধু তাদের মাঝেই এই দ্বীন সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। এই দ্বীন এখন এই জাতির কালচারের অংশ নয়। এই জাতির কালচার এখন পশ্চিমাদের থেকে ধার কার শতশত অপসংস্কৃতি এবং মুল্যবোধে দূষিত। আর এই অপসংস্কৃতি গুলোই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের আনাচে কানাচে।

এমন একটি দূষিত সমাজের অবস্থা পরিবর্তন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ। ইন্টারনেটের বদৌলতে যে অপসংস্কৃতি ও দুষিত মুল্যবোধ গুলো ছড়িয়ে পড়েছে সেই দুষণ থেকে জাতিকে বাচাতে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষের পরিকল্পনা দরকার। বিশেষ করে আলেম সমাজ যাদের নিজেদের যোগ্যতা আছে তাদের উচিত পুরো সমাজকে রাতা রাতি পরিবর্তনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে রিয়ালিস্টিক কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করা। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকারি এটা পদক্ষেপ হতে পারে উচ্চ শিক্ষিতদের ধর্মীয় ভাবে শিক্ষিত করার পরিকল্পনা গ্রহন করা।

education

একে তো শিক্ষিত মানুষদের কাছে শিক্ষা পৌঁছানো সহজ আর দ্বিতীয়ত সমাজের সাধারন মানুষ জন তাদের নিকটস্থ শিক্ষিত মানুষদের অনুসরন করার চেস্টা করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রিভিলেজ প্রদান করে। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ছাত্র ভার্সিটি গুলো থেকে বের হয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে, এদের কোন ভাবে যদি ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে প্রবেশ করানো হয় তাহলে অতিশিঘ্রিই সমাজের অনেক কিছুতে পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ।

একটা ছোট উদাহরন দেই, এই শিক্ষিত ছেলে গুলো যারা কোন ভার্সিটি/কলেজ থেকে পড়া শুনা করে তার নিজ শহরে ফিরে আসে তখন এরা তাদের শিক্ষার আলোকেই সমাজে অনেক কিছু ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। যেমন যে সমাজে জন্মদিন পলন বলতে কোন দিবস ছিলোনা সেই সমাজে এই শিক্ষিত ছেলেরা এসে সামাজিক মেলবন্ধনের নাম করে এমন বিধর্মীকালচার প্রাক্টিস করে। এই শিক্ষিত ছেলেরাই জানে কত উন্নত ভাবে ডিজে পার্টি করা যায় কোন কোন ব্যান্ডের গান বাজানো যায়। এর জ্বলজান্ত উদাহরন হলো থার্টি ফাস্ট নাইট। এই সমাজের শিক্ষিত এবং সম্পদশালী শ্রেণীই এই সংস্কৃতি পালন করে আসছে আর এদের দেখা দেখি মধ্যবিত্ত কেউ, যে কিনা কখনই শুধু আতসবাজি আর পটকাতে হাজার পাচেক টাকা বাজেট দিতো না সেও ডিসেম্বর মাস আসলে ভাবে ছেলে মেয়েদের টাকা দিতে হবে না হলে তারা ছাড়বে না। শিক্ষিত ছেলে মেয়ে বলে ভালোবাসা দিবস পালনে পিতামাতা বাধা দিতে পারে না।

এরকম শত শত অপসংস্কৃতি আর অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে এই শিক্ষিত সমাজের দ্বারা । তাই আমি মনে করি যদি এই শিক্ষিত সমাজকে অপশিক্ষা থেকে যদি বের করে আনা যায়। তাদের জন্য সঠিক জ্ঞানের দার উন্মুক্ত করা যায়, বিশেষ করে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক মানের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় করে যেগুলোতে তাদের কোয়ালিটি সহকারে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া যাবে। আবু আমিনা বিলাল ফিলিপ্সের মত করে আলেম গন যদি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি করা উদ্দোগ গ্রহন করেন। যেখান থেকে ছাত্ররা ট্রেডিশনাল ডিগ্রির মত ডিগ্রি নিতে পারবে অর্থাৎ অনার্স মাস্টার্স করতে পারে।

ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী স্যারের তাইবাহ একাডেমি যেভাবে শিক্ষিতদের টার্গেট করে শর্ট ইসলামিক স্টাডিজ কোর্স কারাচ্ছেন সেভাবে অন্য কোন আলেম অন্য কোন সাবজেক্ট নিয়ে যদি এগিয়ে আসেন। যেগুলো টার্গেট করে শিক্ষিত সমাজকে একটা সুশিক্ষা দিয়ে তার ভিতরে থাকা অপশিক্ষার আস্তরনকে মুছে ফেলতে সাহায্য করবে। আল্লাহ এমন একটা জ্ঞানের বিপ্লবের জন্য আমাদের আলেমদের কবুল করুন আমিন।