emotional intelligence

একবার কিছু বন্ধুমিলে এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে যারা প্লান করলাম। আমার কলেজের বন্ধুরা যারা, একেক জন একেক জায়গায় থাকে, তারা সবাই মিলে একসাথে হয়ে যাবার পরিকল্পনা আমাদের। আমি তাদের বললাম সকাল বেলা আমি রেডি হয়ে থাকবো, আর তোরা যখন রওয়ানা হবি তখন আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিস আমি (ঐ বন্ধুর বাড়ি যাবার বাস স্টান্ডে) আগেই এসে অপেক্ষা করবো। কিন্তু আমি রেডি হয়ে আছি প্রায় ১ঘন্টা হলো অথচ আমার ফোনে তাদের কোন কল আসছে না। ভিতরে ভিতরে রাগ হতে শুরু করলো, পরে বাধ্য হয়ে নিজেই কল করলাম, কিরে তোদের তো আমাকে কল করার কথা আমাকে কল করলিনা কেনো? আমার সেই বন্ধু আমাকে উত্তরে বললো আমরা এখানে আরো ১০-১৫ মিনিট আগেই এসে পৌঁছেছি আর তোকে অনেকক্ষন থেকে ফোনে ট্রাই করছি কিন্তু তোর ফোনে কল যাচ্ছে না। পরে আমি বুঝতে পারলাম হয়ত নেটওয়ার্কের সমস্যার কারনে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি অথচ আমার জন্য ওরা এতক্ষন ধরে রাস্তায় অপেক্ষা করছে, তাই আমি তাদের সরি বলে ওদের আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বললাম।

কিন্তু সমস্যা হলো আমাকে এখন খুবই দ্রুত তাদের কাছে যেতে হবে, কারন তারা অলরেডি অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। এখন যদি আমি দ্রুত যেতে চাই তাহলে আমার জন্য একমাত্র অপশন হলো দুরপাল্লার কোন বাসে যাওয়া। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো এত অল্প দুরুত্বের জন্য দুরপাল্লার বাস কোন যাত্রি উঠায় না। আমি উপায় না দেখে, সুপারভাইজারকে কিছু না বলে একটা বাসে উঠে পড়লাম। (ভাব খানা এমন যেন কতদুরেই না যাবো) এই বাসে ১০ মিনিটের বেশি লাগবে না আমার গন্তব্যে যেতে। কিন্তু সমস্যাটা তখন হবে যখন বাসের সুপারভাইজার শুনতে পাবে আমি পরের স্টপেজেই নেমে যাবো তখন সে আমার উপর প্রচুর রাগ করবে। এই মুহুর্তে আমরা মাথায় যে আইডিয়া গুলো আসলো সেগুলো ছিলো খুবই কর্কস আর কঠোর। মনে মনে ভাবছি সুপারভাইজার কিছু বললে দুই কথা বলে দিবো আর বেশি ঝামেলা করলে আমরাও ঝামেলা করবো। এই সব সাত-পাচ ভাবতে ভাবতেই মন হলো আচ্ছা তার তো আমার উপর স্বাভাবিক রাগ হবে কিন্তু আমি যদি তাকে ভদ্র ভাবে উত্তর দেই তখন কি সে রাগ করবে? ভাবলাম অন্তত পরবর্তী ঝামেলা গুলো এড়িয়ে যাওয়া যাবে। মনকে এবার রাগী মুড থেকে শান্ত করলাম, মটিভেট করলাম, আরে আমার দ্রুত আসার পথে এই বাসটাই আমাকে সাহায্য করেছে এখন এদের সাথে তর্কে না জড়িয়ে পরিবেশটাকে শান্ত রাখি। যখন সুপারভাইজার আমাকে জিজ্ঞাস করলো ভাই কোথায় যাবেন আর আমি তার সেই অপ্রিয় কথাটাই বললাম, স্বাভাবিকভাবেই তার চোখর মুখের এক্সপ্রেশন চেন্জ হয়ে গেলো। তখন খুবই ভদ্রভাবে বললাম ভাই খুবই তাড়া ছিলো তাই আপনারা নিষেধ করা সত্তেও উঠতে হয়েছে। পরে সেই সুপারভাইজার আমাকে ভালোভাবে স্টপেজ আসলে গাড়ি দাড় করিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও আমি সেদিনও ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সর সংঙ্ঘা জানতাম না, তবে যেদিন জানলাম, সেদিন মনে হলো আরে আমার জীবনের এই ঘটনাটা তো ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সর একটা উদাহরন হতে পারে। সেদিন আমার বন্ধুদের উপর রাগ হয়েছিলো ঠিক, দেরি করেছি সে বিষয়ে ভয়ও ছিলো ঠিক, তবুও আমি মাথা ঠান্ডা রেখে সুন্দর করে একটা পরিস্থিত সামাল দিতে পেরেছিলাম।

এবার আসুন জানি ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বলতে আসলে কি বুঝায়

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হলো আমাদের সেই মুহুর্ত যখন আমরা আমাদের নিজেদের ও অপরের আবেগ সম্পর্কে সচেতন হই, আর এই সচেতনতার ফলে আমরা উপকারি আবেগগুলোকে সক্রিয় করি এবং ক্ষতিকর আবেগগুলোকে নিষ্ক্রিয় করি এবং এর দ্বারা নিজেদের কাজকর্ম, আচরন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি ও অন্যের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে পারি।

আমি সেই সময় বুঝে পেরেছিলাম আমার নিজের মাঝে রাগ হচ্ছে এবং আমার বিপরীতের সেই সুপারভাইজারেরও রাগ অনুভব হবে। এবং ফাইনালি নিজের বড়ি ল্যাঙ্গুয়েজ ভয়েজ এবং শব্দচয়ন ঠিক করে আমি সেদিন কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই নিজের উদ্দেশ্যকে সফল করেছিলাম। নিজের ক্ষতিকর আবেগ যেমন রাগ করা কঠোর শব্দ ব্যবহার করা, হটকারি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখানো ইত্যাদি না দেখিয়ে বরং আমি উপকারি আবেগুলোকে সক্রিয় করতে পেরেছিলাম।