Imagination


উদাস বিকেল বেলা, বাগান বাড়ির একদম শেষ প্রান্তে রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আছেন রিহান শেখ। দুপুর শেষে এই সময়টাতে বড্ড একা লাগে তার এজন্যই প্রকৃতির মাঝে এসে কল্পনায় হারিয়ে হারিয়ে যাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে অনেক পাখি গাছের ডালে বসে কিচির মিচির করছে। আরে কয়েকটা পাখি গোসল সেরে এখনো গা সুকাচ্ছে, পাখি গুলো হয়তো সারাদিনের ক্লান্তি শেষে গোসল করলো এই বিকেল বেলা। একটু পর সন্ধ্যা নামলেই ওরা ঘুমোতে যাবে। কিন্তু রাতে তেমন ভালো ঘুম হয়না রিহান সাহেবের। ঘুমানোর জন্য একটা প্রফুল্য মন থাকতে হয়, সারাদিন তো একা একা থাকেন রিহান সাহেব কারো সাথে তেমন কথা বলার সুযোগ নেই। নিজের মনের সাথে নিজেই যেসব গল্প করেন সেগুলো ছাড়া। 

চেয়ারে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখলে সূর্যটা জ্বালছে, আজ ততটা প্রখরতা নেই এর আলোর মাঝে। আকাশে মেঘ নাকি ঘন ধোয়া বুঝা যাচ্ছে না। মনে মনে ভাবছেন রিহান সাহেব এই সূর্যটা প্রতিদন কতশত হাইড্রজেন, হিলিয়াম পুড়িয়ে আমাদের আলো দিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে হাসছেন রিহান সাহেব, সূর্যটা আমাদের সোলার সিস্টেমের কেন্দ্রে রয়েছে এর চারিদিকে ঘুরছে আমাদের পৃথিবী। আরে আমরা ঘুরছি কিন্তু বুঝতে পরছি না, আমরা কত ছোট। কেমন যেন লাগে এসব ভাবতে, আমরা ফুটবলের মত একটা গ্রহের উপরে বসবাস করি আর এটাই শেষ না, এর মত রয়েছে লক্ষ্য কোটি গ্রহ। সবচেয়ে আজব ব্যপার হলো এই পৃথিবীটা নিজের অক্ষে যেমন ঘুরছে তেমনি সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। আরে এই যে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে সেজন্যইতো একটা বছর হয়, আর পৃথিবী তার অক্ষে ঘুরছে বলেই তো দিন রাত হয়। আবার চাদ আমাদের পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে আর তাইতো মাস হয়। কেমন যেন আনমনা লাগছে রিহান সাহেবের এদিকে একসাথে এত এত কিছু চলছে পৃথীবির বাহিরে, আমার তো পৃথিবীতে যেগুলো চলছে সেগুলো ভাবতেই মাথা কুলোয় না। 

আকাশে এখন সূর্যটা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না, আকাশে ঘন কুয়াশার মত ধোয়া জমে আছে মনে হচ্ছে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে হয়তো মিট মিট করে জ্বলছে এমন অন্য কোন তারা দেখা যেত। আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে দুনিয়াতে ফিরে এলেন রিহান সাহেব, দুনিয়াটা আরো ভয়ানক এখানে কেও বেচে থাকে না। প্রতিদিন মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে চলতে হয়। এই না বুঝি কখন মৃত্যুর ফেরেশতা এসে যায়। এই ভাবনা টা কঠিন, এত বছরের পুরোনো পৃথিবী এত এত জ্ঞানী গুনি বিজ্ঞানী আর কেউ কিনা মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি। এটা এমন এক স্টেজ যেখানে গিয়ে সবাই ব্যার্থ। মৃত্যুর জন্য কোন ফ্যাক্টরকে দায়ী কার যায় না, যখন কেউ বলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেছে তখন খুবই হাস্যকর লাগে। আরে মৃত্যু বরন করেছে বলেই তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ কত কঠিন মুহুর্ত থেকে সার্ভাইভ করে ফিরে আসে আর একটা স্বাভাবিক মানুষের হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে কেন? রিহান সাহেবের কাছে আরো একটা কথা খুবই হাস্যকার লাগে বিশেষ করে তার বয়সি কোন ব্যক্তি যখন বলে আমাদের মৃত্যুর সময় হয়ে এসেছে। আরে আমাদের মৃত্যুর সময় তো তখনি হয়েছে যখন আমরা জন্মগ্রহন করেছি। কতশত বাচ্ছা মায়ের পেট থেকে দুনিয়ায় আসার আগেই মারা যায়, কতজন দুনিয়ার আসার কয়েক মিনিট বা ঘন্টা পর মারা যান। মৃত্যুর সময় আর অসময় বলতে কিছুই নেই। এইতো আমি এখন বসে বসে এসব ভাবছি আমিতো এখনি মরে যেতে পারি (ভাবছেন রিহান সাহেব)। 

আলতো করে চোখটা বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলেন, কেমন লাগবে সেই সময়টা যখন আমার মৃত্যুর সকল আয়োজন চলবে? আমার চোখের সামনেই ঘটবে সবকিছু। ভাবতে ভাবতে আনমনে উচ্চারন করছেন রিহান সাহেব, “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসুলূহু” হে আল্লাহ তুমি ছাড়া আর কোন সৃষ্টা নেই এই বিশাল বিশ্বভ্রমান্ড তুমি তৈরি করেছো আর আমাদের কাছে তোমার দিক নির্দেশনা পাঠাতে তুমি মুহাম্মাদ সাঃ কে পছন্দ করেছ। আমি তোমার উপর তোর দেয়া সকল বিধানের উপর ইমান আনছি, ইমান আনছি তোমার পাঠানো দূতগনের উপর, আমি কিয়ামত, তাকদির ও ফেরেশতাদের উপরেও ইমান আনছি। হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য আমার কবরকে সহজ করে দাও, আমি শুনেছি যার কবর সহজ হয়ে যাবে তার বাকি সকল পথ সহজ হয়ে যাবে। হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য কবর এবং পরবর্তী সকল স্টেজ সহজ করে দাও। সেই সাথে আমার পরিবার বন্ধুদের জন্যেও সহজ করে দাও যাতে আমরা একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি। আমিন

কতক্ষন ধরে এই ভাবে দোয়া করে যাচ্ছেন খেয়াল নেই রিহান সাহেবের, তার মনে হচ্ছে এই বুঝি দিগন্ত জুড়ে ফেরেশতাদের বহর দেখতে পাবেন। নাহ চোখ খুললেন, এখন এসব কিছুই হচ্ছে না, তবে নিশ্চিত যে একদিন না একদিন এইসব কিছু আমার সাথেও হবে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে সেই দিন শক্ত থাকার তৌফিক দিও আর এইভাবে কালিমা পড়ে বিদায় নেবার তৌফিক দিও। রিহান সাহেব আর সস্থানে বসে থাতে পারছেন না কেমন যেন লাগছে উঠে চলে গেলেন উযু করতে।