The secret behind 11.11

আপনি হয়ত বিভিন্ন ইকমার্সের প্রমোশনের সুবাধে এই ১১.১১ বা ১২.১২ সংখ্যা গুলো দেখেছেন । এই ধরনের প্রমোশনাল স্ট্রেটেজি ২০০৯ সালের পূর্বে ইকমার্স সেক্টরে ছিলো না । ২০০৯ সালের ১১ ই নভেম্বার সর্বপ্রথম আলিবাবা কোম্পানি এই ধরনের প্রচারনা শুরু করে । কিন্তু এর পরেও মুসলিম বিশ্বের বড় কোম্পানি গুলো এই ধরনের সংখ্যা বা তারিখকে কেন্দ্র করে কখনই কোন প্রমোশন চালাতো না । যেমন বাংলাদেশের কোন কোম্পানি অন্তত দারাজ বাংলাদেশে এসব শুরু করার আগে ছিলো না। কিন্তু ইদানিং (এই সংখ্যা গুলো অর্থাৎ 11.11 বা 12.12 ইত্যাদি) কে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রমোশন/অফার চলছে। আর এজন্য এখন এই বিষয়ে কথা না বললে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের ঈমান আমল আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কমদামে পন্য কেনার ধোকায় পড়ে ঈমান বিধ্বংসী কোন কাজে জড়ানো যাবে না। যাইহোক এই মার্কেটিং আইডিয়াটা আমরা মুলত বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিখেছি। বাংলাদেশে এমন প্রমোশন প্রথম শুরু করে লাজাদা গ্রুপের দারাজ ডট কম ইকমার্স। এখনো এধরনের পুরো ক্যাম্পেইন দারাজ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। 

এখানে একটা বিষয় খুবই লক্ষ্যনীয় যে, বিশ্বের বড় বড় যেসব প্রতিষ্ঠান যেমনঃ ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ইত্যাদি এরা সবাই পৃথিবীর যত জঘন্য কাজ রয়েছে যেমনঃ নাস্তিক্যবাদ, গে বা রেইনবো বা সমকামিতা, LGBTQ এগুলোকে সমর্থন করে। এরা কেন এগুলোকে সমর্থন করে? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা এই পোস্টে খুঁজবোনা তবে এখানে একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই তা হলো, পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানুষ এর সংখ্যা বেশি নাকি গে এর সংখ্যা বেশি? নিশ্চয় স্বাভাবিক মানুষ, যারা তাদের সন্তানদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে তুলতে চায় কিন্তু এই সব প্রতিষ্ঠান যাদের নিত্য ভোক্তা আমরা, আবার আমাদের সংখ্যাই বেশি তবুও তারা কেনো আমাদের মাঝে তাদের ঐসব নোংরা মতবাদ চাপিয়ে দিতে চায়? যারা নেটফ্লিক্স দেখেন তারা জানবেন নেটফ্লিক্স তাদের মুভিতে কোননা কোন একটা মতবাদ চাপিয়ে দিতেই মুভি বানায় । তাদের ব্যবসাগুলো এখন আর নিছক কোন ব্যবসা নেই । যেমন, পৃথিবীর কোন মটিনারি ফান্ট বা বড় বড় ব্যাংক অযথা কাউকে লোন দেয় না। লোন দিয়ে তো সুদ পায় তবুও তাদের এই লোনের আড়ালে থাকে অন্য একটা স্বার্থ। এই পোস্টা পড়তে পারেন -  ব্যাংক লোন মানে পরাধীনতা। কিভাবে?

আচ্ছা মুল বিষয়ে ফিরে আসি, আপনি এখন হয়ত ভাবছেন তাহলে, ইকমার্স দুনিয়ায় এই ১১.১১ বা ১২.১২ এর ব্যাখ্যা কি? কেন তার এই সংখ্যা গুলোকে বেছে নিলো? এর পিছনে তাদের মতাদর্শকি? এগুলো তো স্বাভাবিক সংখ্যাই মনে হয় এগুলোতে তেমন কোন সমস্যা তো দেখি না।

জ্বী, প্রথম প্রথম আমিও আপনার মত ভেবেছি যে, এটা Just একটা তারিখ, ১১ তম মাসের ১১ তম দিন অথবা ১১টা বেজে এগারো মিনিট। মানুষ সহজে মনে রাখতে পারবে তাই এই দিনে বা সময়ে অফার দিলে বেশি পন্য বিক্রি করা যাবে। জ্বী এত সহজে বিষয়টা হলে হয়ত কোন সমস্যাই ছিলো না। কিন্তু এই বিষয়টা ততটা সহজ বিষয় নয়। কারন এর পিছনে কতগুলো ধর্মীয় গোষ্ঠির বিশ্বাসের বিষয় রয়েছে। আর এই জন্যই সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে মুসলমানদের জন্য কি এই রকম ক্যাম্পেইন হালাল? বা এই ধরনের ক্যাম্পেইনে কিছু কেনা কি হালাল? 
আপনি যদি একজন প্রাক্টিসিং মুসলিম হন এবং শিরক-বিদাআত, হালাল-হারাম আপনার জন্য ম্যাটার করে তবে অবশ্যই এই পোস্টি আপনাকে হেল্প করবে ইনশাআল্লাহ। আর আমি বিশ্বাস করি গতানুগতি জীবনধারার কোন মুসলিম এত সময় নিয়ে এই পোস্টের এত দুর পড়তে আসবে না। যদি আসে তো আলহামদুলিল্লাহ। এবার আসি মুল আলোচনায়।
.
প্রথমে ছোট করে উত্তর দিচ্ছি এবং পরে আরো বিস্তারিত লিখছি।
১০.১০ বা ১১.১১ বা ১২.১২ দিন গুলোতে বিশ্বাস করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয় বিশেষ করে যে উদ্দেশ্যে এই দিনটি গুরুত্ব পেয়েছে। আর এই দিনকে কেন্দ্র করে যে সব প্রমোশন করা হয় সেগুলোতেও।

আচ্ছা কি সেই বিশ্বাস?
১১.১১ বলতে যে বিশ্বাসটা বিধর্মীদের মাঝে পরিচিত তা হলো, এই সংখ্যাটি একটি অ্যানজেল নাম্বার বা ম্যাজিক্যাল নাম্বার বা লাকি নাম্বার। সংখ্যাতত্ত্ববিদরা মনে করে থাকেন যে, এই সংখ্যার প্রভাব আমাদের জীবনের উপর রয়েছে। আপনি যখন ঘড়িতে দশটা দশ বা এগারোটা এগারো বা বারোটা বারো বাজতে দেখেন এর মানে এটি পজেটিভ সাইন। আপনার সাথে ভালো কিছু হতে যাচ্ছে। কেউ আবার একটু বাড়িয়ে বলেন যে, এই সময় কোন আত্মা উপস্থিত হয়েছে।

অর্থাৎ আপনি একটি কাজ করতে চাচ্ছেন আর আপনি হঠাৎ আনমনে যখন ঘড়ির দিকে তাকালেন তখন দেখলেন ১১টা ১১ বাজে, এই বিশ্বাসী গোষ্ঠী বলতে চাচ্ছে এটা একটা পজেটিভ সাইন, এবার আপনি আপনার সেই কাজ শুরু করে দিন, কারন এই সংখ্যাগুলো আপনাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঠিক যেমন আমরা যখন কিছু ভাবি আর তখন যদি টিকটিকি ঠিক ঠিক করে উঠে, তখন ভাবি আমার ভাবনা মনে হয় সঠিক বা আমি যা বললাম তা সঠিক। কিন্তু আপনি নিশ্চয় জানেন যে টিকটিকির ঠিক ঠিক যে বিশ্বাস করবে সে শিরক করলো। যদি না জানেন তবে এই বিষয়ে এই ভিডিও গুলো দেখতে পারেন Video 1, Video 2

টিকটিকির ঠিক ঠিক শব্দ যেমন ভুয়া তেমনি এই সংখ্যাগুলোও ভুয়া। কিন্তু এর প্রতি বিশ্বাস শিরক। কারন আমাদের ভবিষ্যত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ছাড়া আর কেউ জানেন না। আমাদের জন্য কোনটি ভালো আর কোনটি খারাপ এটি আগে থেকে কেউ বলে দিতে পারে না। আর এই টিকটিকি ও সংখ্যাগুলো তো আরো অসাড়। 
অথচ দেখেন এগুলোকে নিয়ে বর্তমান সময়ের এক শ্রেণীর বিশ্বাসীরা কিনা করছে। সারা পৃথিবীতে এই দিন ও সময় গুলোকে কেন্দ্র করে গিফ্ট দেয়া, ছাড় দেয়া হয়। যেহেতু ১১টা বেজে ১১মিনিট শুভ সময় তাই এই সময় আপনি বেস্ট ছাড় টাই পাবেন। আপনার জন্য এখন ভালোকিছু পাবার সময় হয়েছে। 

এই বিষয়ে কিছু রেফারেন্স দেয়া যাক। এই সংখ্যা গুলোর পাওয়ার কতটা তা এই ভিডিওটা দেখলে বুঝতে পারেন Reference 1 অথবা ইউটিউবে যদি সার্চ করেন meaning of 11.11 তবে অনেক ভিডিও পাবেন, অনেক মতাদর্শের মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাসও পাবেন। মুসলিম ভাই বোন যে কেউ এই ভিডিও গুলো দেখবেন, অনুগ্রহ করে আপনারা তাদের কথায় ধোকা খেয়ে যাবেন না। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের আলেমদের কঠোর সমালোচনা রয়েছে, ইউটিউবে পাবেন। এই ভিডিওটি দেখতে পারেন Video 3

Numerology র এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে হিন্দু, খৃষ্টান সহ অনেক ধর্মের লোকেরাই গা ভাসিয়েছে এবং তাদের ধর্ম গ্রন্থ ও বিশ্বাসের সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করেছে। বিষয়টি নিয়ে আপনার বেশি আগ্রহ হলে এই পেইজ গুলো পড়তে পারেন, Wiki  বা Dictionary.com  এছাড়াও গুগল করলে খৃষ্টান ধর্ম মতে এই ব্যাখ্যা কি হিন্দু ধর্ম মতে এর ব্যাখ্যা কি এগুলো পাবেন । 
Vogue.in সাইটে তারা এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে পড়ে দেখতে পারেন click here. রাশিফল গণনা, হাত গণনা, লাকি নাম্বার ইত্যাদি যেসব কনসেপ্ট রয়েছে এগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলোর মতই একটি বিষয় হলো এই ১১.১১ বা ১২.১২ নাম্বার।

আপনি চাইলে Star being কনসেপ্ট টা নিয়ে পড়তে পারেন এতে করে আরো বেশি ক্লিয়ার হবেন। solara an-ar মেডিটেইশন এবং এর কনসেপ্ট গুলোও নিছক কোন স্বাভাবিক মনকে শান্ত করার মেডিটেশন নয় যদিও এগুলো এখন প্রচুর শেয়ার হয় কারন ওরা চায় আপনি জেনে বা নাজেনে তাদের বিশ্বাস ধারন করুন। নিজের প্রশান্তির জন্য তাদের মত করে ধ্যান করুন। 

পরিশেষে, বড় বড় কোম্পানি যেগুলোর সার্ভিস পন্য ছাড়া আমাদের দিন রাত্রি কাটে না, এরাই ছলে বলে কৌশলে মুসলমানদের বিশ্বাসে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। তাদের এই স্লো পয়জনিং খুবই সূক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বাভাবিক ভাবে আমাদের ভাবনায় আসে না এগুলোর পিছনে কত কিছুই না থাকে পারে। যাইহোক দুনিয়ায় ইমান নিয়ে টিকে থাকতে আমাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে ।